এ্যান্টনি অপু: কোনো সংকটই বাধা হতে পারেনি আবু জাইমার। দারিদ্র্যতা তার কাছে হার মেনেছে। জয়ী হয়েছে সে। এ বছর জাইমা যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে জাইমা। তবে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ, আগামী দিনের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে।
যশোর শহরের মিশনপাড়া খ্রিষ্টান কবরস্থান এলাকার আবু জাফর ও সুরাইয়া ইয়াসমিনের বড় মেয়ে জাইমা। তার বাবা পেশায় একজন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী।
সোমাবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশকালে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জাইমাসহ তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা মেলে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অজস্রে কেঁদে চলেন জাইমা এবং তার মা-বাবা। এ কান্না কোন দুঃখের নয়। জাইমার সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলে আনন্দে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল তাদের।
পরে তাদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। জাইমার বাবা আবু জাফর জানান, জাইমা ও দুই ছেলেসহ মোট পাঁচ জন সদস্য তার পরিবারে। তিনি ভ্যানে করে যশোরেরে ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও শার্শা এলাকা থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে তা যশোর শহরে বিক্রি করেন। আর এ পেশায় নির্ভর করে চলে জাইমা ও দুই ছেলের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ।
আবু জাফর বলেন, ‘আমি পা ভ্যান চালিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে যশোরে এনে বিক্রি করি। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে জাইমার পড়াশোনা চালিয়েছি এবং পুরো সংসারের খরচ সামাল দিয়েছি। পড়াশোনার প্রতি জাইমার আগ্রহ থাকায় দরিদ্র হওয়া সত্বেও আমি পিছু পা হয়নি। ধার দেনা করে আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগান দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, মেয়ের ফলাফলে অনেক খুশি। আমার মেয়ের স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো সামর্থ নেই। দিন আনি দিন খাই। এখন মেয়েকে কলেজে ভর্তি করিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
জাইমার মা সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার মেয়েকে গাইড বা প্রয়োজনীয় বই কিনে দিতে পারিনি। জাইমা ওর সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে, অনলাইন থেকে পড়েছে। এমনকি পরীক্ষার আগে ফরম ফিলাপের এক হাজার ৪০০ টাকা চার-পাঁচজনের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে দিতে হয়েছে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ এবং পরবর্তী ধাপে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার জন্য আমাদের সহোযোগিতা প্রয়োজন।
জাইমা জানায়, জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক আনন্দিত। করোনার সময় আমাদের পরিবারের অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো। এরমধ্যে প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি তবুও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। আমার বাবা মা আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে চাই। তবে আমার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো কিনা জানি না।
জাইমাদের প্রতিবেশী কামাল হোসেন বলেন, ‘জাইমার পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ। অসহায়ত্ব বা দরিদ্রুতা কোন কিছুই তাকে হার মানাতে পারেনি। মেয়ের স্বপ্ন বা¯তবায়ম ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার বাবার পক্ষে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেধাবী মেয়েটি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করি।’
এর আগে জাইমা জেএসসি ও পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ভালো রেজাল্টের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছেন। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখছেন জাইমা।