মে মাসে আট খুন
লেগেই আছে ছুরিকাঘাত
উঠতি সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি হবে। পুলিশের উচিৎ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা
– আ.লীগের সভাপতি মিলন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে
– অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর
আবদুল কাদের: হঠাৎ যেন যশোর অশান্ত হয়ে উঠেছে। গেল মে মাসে জেলায় ৮ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। পৌরসভার কাউন্সিলরসহ একাধিক ব্যক্তি ছুরিকাঘাত ও জখমের শিকার হয়েছেন। ছিনতাই, চুরিতো আছেই। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতংকিত। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিশেষ করে যশোর সদর অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। সর্বত্র ভীতি বিরাজ করছে শহরে। গত দুদিন ধরে মানুষ রাত ৯টার মধ্যে বাড়িতে প্রবেশ করেছে অজানা ভয় নিয়ে।
শহরের পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে একাধিক অপরাধী চক্র। যাদের নামে রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা। এসব অপরাধীরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, গেল মে মাসে জেলায় ৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ মে কেশবপুরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের রিপন হোসেন তার স্ত্রী মেরিনাকে (২২) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ঘাতক রিপন যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তুচ্ছ ঘটনায় কথাকাটিকাটি হলে স্ত্রীকে নির্মমভাবে ছুরি মেরে হত্যা করে।
১৬ মে ঝিকরগাছার সোনাকুড় গ্রামের আবদুস সাত্তারের মাল্টার বাগান থেকে সখিনা বেগমের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি ওই গ্রামের নিয়াম উদ্দিনের স্ত্রী। এই ঘটনায় পুলিশ একই গ্রামের মিজানকে আটক করে।
পরের দিন ১৭ মে সদরের চাঁনপাড়া গ্রামে পিতা নূরুল ইসলামের হাতে খুন হন তারই ছেলে রুহুল আমিন (১৫)। জমি নিয়ে বিরোধে ছেলেকে হত্যা করে নূরুল ইসলাম। পুলিশ তাকে আটক করে জেলা হাজতে পাঠিয়েছে।
২১ মে সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের ইরয়ান গাজী (২৫) প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। পরের দিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। একই এলাকার গোলাম শরিফ, জাকারিয়া, বুদো, নাহিদের সাথে বিরোধ ছিল। যেকারণে সন্ত্রাসীরা তাকে কৃঞ্চবাটি গ্রামে বোন শাহানার বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করে।
২২ মে সদরের কৃঞ্চবাটি গ্রামের পশ্চিমপাড়ার রাসেল হোসেনের (২৪) গলিত লাশ নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ ২৯ মে শহরের নাজির শংকরপুর চাতালের মোড়ে আফজাল হোসেনকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পূর্ব আক্রোশের জের ধরে সন্ত্রাসী ট্যারা সুজনের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাকে খুন করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ৩০ মে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবুলকে কুড়াল দিয়ে মাথায় কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করে নিহত আফজালের লোকজন। তার অবস্থাও আশংকাজনক।
একাই দিন বাঘারপাড়ার পাইকপাড়ায় চোখ উপড়ে, শ্বাসরোধ ও পুরুষাঙ্গ কেটে নকিম উদ্দিন (৬০) নামে এক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। ২৬ মে উপজেলার ছাতিয়ানতলা বাজার থেকে ধান কাটার জন্য নকিম উদ্দিনসহ তিনজন শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে আসেন বেনজির আহম্মেদ।
৩০ মে শহরের কাজিপাড়ায় পাইলিং করতে গিয়ে মাটির নিচে একটি ড্রামের মধ্যে থেকে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
যশোর আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন টুলু জানান, যশোর হঠাৎ করেই যেন অশান্ত হয়ে পড়েছে। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বেশি খুনোখুনি হচ্ছে। পুলিশের কর্তব্য অবহেলা অনেকটা এর জন্য দায়ী।
যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি শরিফ নূর মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, আমাদের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বাবুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। শহরের মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী উঠতি সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পেলে এবং পুলিশ তৎপর হলে এসব সন্ত্রাসীদের দমন করা সহজ হবে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, উঠতি সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি আসবে। পুলিশের উচিৎ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কেননা সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই, এরা নিজেদের সুবিধার জন্য দল করার চেষ্টা করে। এদেরকে প্রতিহত করা দরকার।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, পুলিশ অপরাধীদের আটকে কাজ করছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরো পড়ুন: ছুরির ফলায় যশোর