সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট
ঢাকা অফিস
ট্রাইব্যুনালে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব কর্মকর্তা রোকোনুজ্জামান বলেন, ‘সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, নারী কণ্ঠস্বরটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, আর পুরুষ কণ্ঠটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ এবং ‘যেখানে তাদের পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোন আলাপের অডিও রেকর্ড পরীক্ষা করে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বলে জানানো হয়।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ দেওয়া সাক্ষ্যের জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক রোকোনুজ্জামান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তিনি ৪৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।
ট্রাইব্যুনালে রোকোনুজ্জামান বলেন, ‘সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, নারী কণ্ঠস্বরটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, আর পুরুষ কণ্ঠটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের।’
সাক্ষ্য দেয়ার সময় ট্রাইব্যুনালে ওই অডিও রেকর্ডও শুনানো হয়।
কিছুদিন আগে সামাজিকমাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ডিংয়েও জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ ও ‘যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি’ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের মধ্যে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তথ্যমতে, ওই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং ২০ হাজার আহত হন।
একটি বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের মধ্যে হওয়া ফোনালাপ রেকর্ড করে। ওই কলটিতে শেখ হাসিনা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বলেন, ‘আমার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি সরাসরি নির্দেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই আমি বলেছি। আমি এতদিন তাদের থামিয়ে রেখেছিলাম… আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করা হচ্ছে।
‘যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ দেখবে, সেটা উপর থেকে – এখন উপর থেকে করা হচ্ছে – এটা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। এটা শুরু হয়েছে। কিছু [বিক্ষোভকারী] সরে গেছে।’
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ওই অডিও রেকর্ডটি শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের ফোনালাপ।