আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যশোরের নাভরণ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবনের কোলের ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ গত এক যুগে এক ইঞ্চিও অগ্রসর হয়নি।
গত ২০১০ এর ১০ জুলাই শ্যামনগরে আইলা ক্ষতিগ্রস্থ জনপদ পরিদর্শনে এসে জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেল পথ নির্মাণের ঘোষণা দেন। যে ঘোষণা ও পরিকল্পনা শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে।
এই রেলপথ চালুর মাধ্যমে সুন্দরবন এবং প্রতœনিদর্শন দেখার জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকের গমনাগমন বৃদ্ধি পাবে। যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি জনগণের মান উন্নয়ন হবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঘোষণার পরপরই দ্রুত শুরু হয় জরিপ, ভুমি অধিগ্রহণ স্টেশনের স্থান নির্ধারণ, ব্রিজ কালভাটের স্থান নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় কাজ। তড়িৎ গতিতে এগুলো এই কর্মযোগ্যে গতি অদৃশ্য হাতের করাঘাতে এক প্রকার স্তিমিত হয়ে পড়ে। এতে সুন্দরবন উপকূলীয় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মনে হতাশা জমেছে। পাশাপাশি তারা ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন।
রেলপথ বিভাগের একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নাভরণ থেকে মুন্সিগজ্ঞ গ্যারেজ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ-প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কন্সট্রাকশন অব নিউ বিজি ট্র্যাক ফর্ম নাভারন টু সাতক্ষীরা প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৩২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীনের কাছে থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি সময় থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। নাভারন থেকে মুন্সীগঞ্জ গ্যারেজ পর্যন্ত রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার।
রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাভারণ থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত থাকবে আটটি স্টেশন। এগুলো হলো- নাভারণ, বাগআঁচড়া, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, পারুলিয়া, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও মুন্সীগঞ্জ। একইসঙ্গে রেলপথের সেতু নির্মিত হবে বাঁকাল, লাবণ্যবতী, সাপমারা খাল ও কাকশিয়ালী নদীর ওপর।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন, অন্যতম কৃষিজ সম্পদ ‘সাদা সোনা’ (চিংড়ি), ধান, আম, কুল, সুন্দরবনের মধু, বঙ্গপোসাগর উপকূলীয় নদ-নদীর এবং ঘেরের সাদা মাছ, সুন্দরবনের কাঠ ও নানা রপ্তানিযোগ্য সমৃদ্ধ সম্পদ রয়েছে এই জনপদে। রেলপথ হলে এ সকল সম্পদের সুষ্ঠু সরবরাহ সম্ভব হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। জেলার একমাত্র স্থলবন্দর ভোমরা যথেষ্ঠ অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করবে। কিন্তু ১২ বছরেও কাজ শুরু না হওয়ায় তা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।