ঢাকা অফিস
ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বেশিরভাগ মানুষ যখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন অনেক শ্রমিক রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে, এখনও বকেয়া মজুরি এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করতে হচ্ছে পোশাক শ্রমিকদের। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার সহ বেশ কয়েকটি শিল্প এলাকায় বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির খবর পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার শ্রম ভবন থেকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল করা শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েক অনেক শ্রমিক আহত হন। রবিবার শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় ১৪ মাসের বকেয়া মজুরি না পাওয়া একটি কারখানার একজন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রতি ঈদের পূর্বে ঘটে যাওয়া এই নিয়মিত দৃশ্যপট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে অবসান ঘটবে-আমরা তা আশা করেছিলাম। বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই ঈদের আগে পোশাক রপ্তানিকারকদের মাঝে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯৯ শতাংশেরও বেশি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে এবং ৯৫ শতাংশেরও বেশি কারখানা ঈদ বোনাস প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া বেতন, বোনাস এবং মার্চ মাসের কমপক্ষে ১৫ দিনের বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কিছু কারখানা এখনও তাদের আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট পোশাক কারখানা মালিকদের ব্যর্থতার সঙ্গে এটি সরকারেরও ব্যর্থতা।
যারা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন এমন ১২ জন পোশাক কারখানার মালিকের উপর মঙ্গলবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। ২৭ মার্চের মধ্যে বকেয়া বেতন এবং বোনাস পরিশোধ করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে – এমন একটি শর্ত থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে অনেকেই পূরণ করতে পারবেন না। এর অর্থ দাঁড়ালো, এমন কারখানাগুলির শ্রমিকরা অবৈতনিক ছুটিতে যাবেন, যা তাদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
যে শিল্প থেকে পোশাক রপ্তানিতে কোটি কোটি টাকা আয় হয়, সেই শিল্পের শ্রমিকদের প্রতি এই অনুদার আচরণ অগ্রহণযোগ্য। জুলাই আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের অনেকেই আশা করেছিলেন এই অবিচারের প্রবণতা হয়ত দূরীভূত হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই পুরনো অভ্যাস ও অবিচারগুলিই আরও প্রবলভাবে জারি রয়েছে। আগের মতোই শ্রমিকদের সমস্যাগুলি সমাধানে এখনও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই, যার ফলে শ্রমিকরা বারবার রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হচ্ছেন এবং তাদের উপর নির্বিচার হামলা, লাঠিচার্জ অব্যাহত রয়েছে।
আমরা প্রত্যাশা করি, এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। কারখানার মালিকদের সময়মতো তাদের শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের দায়িত্ব নিতে হবে। সেইসঙ্গে পোশাক মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছেন কিনা সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিকদের মজুরি দিতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: মনিরামপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মার্কেটে ঢুকে গেল বাস