নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী পাঁচ শিক্ষকই হচ্ছেন যশোর বোর্ডের। মঙ্গলবার তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কলেজ পরিদর্শক কেএম গোলাম রব্বানিকে। অন্য দুই সদস্য হলেন- শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপ-কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। এ ব্যাপারে বোর্ড সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যশোর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই প্রশ্নের উদ্দীপক (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ) হিসেবে এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এটি নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হচ্ছে- এতে সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীদের (মডারেটর) চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। মঙ্গলবার তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষক এবং পরিশোধনকারী চার শিক্ষককে সনাক্ত করে যশোর শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়েছে।
এরা হলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল এবং চার পরিশোধনকারী শিক্ষক হচ্ছেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব জানিয়েছেন, ওই প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং চারজন মডারেটর সবাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ঢাকা বোর্ড তাদের সনাক্ত করে যশোর বোর্ডকে জানিয়েছে। আমরা ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, এমন প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কিভাবে এই প্রশ্নপত্র হলো সেটি তদন্তের জন্য দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল’র ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, প্রশান্ত কুমার পাল একজন ভাল শিক্ষক। কিন্তু তারপরও তার হাত দিয়ে এমন প্রশ্ন কিভাবে হলো বুঝতে পারছেন না। কিন্তু যেটি হয়ে গেছে সেটি তো সত্য। এখন বোর্ড যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
প্রশ্নপত্রের মডারেটর নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন বলেন, তিনি ওই প্রশ্নের মডারেশনে ছিলেন। এ ধরণের প্রশ্ন থাকলে তা সংশোধন করে দেয়া হয়; অথবা কেটে নতুন প্রশ্ন সংযোজন করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্নটি রয়ে গেল তা বুঝতে পারছেন না।