চারু আদিত্য: গরু মাত্র একটি। আর তাতেই বাজিমাৎ। দুধসহ সার ও জ¦ালানির উৎস যোগাচ্ছে এটি। বাড়ির এক কোণে ছোট্ট একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। যেটি সাত সদস্যের পরিবারটির জ¦ালানির চাহিদা মেটাচ্ছে বছরভর। গোবর লাগে প্রতিদিন তিন বালতি। মিক্সিং ট্যাংকিতে ঢেলে পানি মিশিয়ে হ্যান্ডেল ঘুরালে গোবরের মিশ্রন গ্যাস চেম্বারে চলে যায়। তারপর সেখানে উৎপন্ন হয় বায়োগ্যাস। এভাবে যেটুকু গ্যাস উৎপন্ন হয় তাতে তিন বেলার রান্নার কাজ অনায়াসে সারা যায়।
বছর পনের আগে মণিরামপুরের রোহিতায় মেহেদি হাসান শিমুলের বাড়িতে বায়োগ্যাসের ওই প্লান্টটি স্থাপন করা হয়। আর তখন থেকেই এটিতে উৎপন্ন গ্যাস দিয়ে পরিবারের জ¦ালানির চাহিদা পূরণ করে আসছেন।
শিমুল জানান, বাড়ির গাভীটি থেকে যেটুকু গোবর পাওয়া যায় তার সবটুকুর দরকার হয় না। প্লান্টে প্রতিদিন তিন বালতির মত গোবর ঢালতে হয়। আর তা থেকে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন হয় তাতে তিন বেলার রান্নার কাজ ভালোভাবে চলে যায়।
একটি এনজিও’র মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে বায়োগ্যাসের প্লান্টটি বাড়িতে বসানো হয়। তখন থেকেই বাড়ির জ¦ালানির প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে প্লান্টটি। সকালের দিকে তিন বালতি গোবর গুলে দিলেই হলো। এরপর চেম্বারের মধ্যে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে যায়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা করে কোনও খরচও নেই। ফলে অনেক সাশ্রয়ী এই প্লান্টটি, বলেন শিমুল।
ঢাকনাযুক্ত বড় একটি ট্যাংকির পাশে গোলাকৃতির ছোট্ট একটি হাউস। হাউসটির মধ্যে একটি হাতল। হাউসে গোরের সাথে পানি মিশিয়ে হাতল ঘুরিয়ে দিলে মিশ্রন গ্যাস ট্যাংকি বা চেম্বারে চলে যায়। তারপর সেখানে তৈরি হয় বায়োগ্যাস। বাড়ির রান্নাঘরে দুই চুলার গ্যাস স্টোভ জ¦ালিয়ে রান্নার দৃশ্য দেখা যায়। শিমুলের বাড়ির নারী সদস্যরা জানান, অন্য চুলার মত এটিতেও ভালো তাপ উৎপন্ন হয়। যাতে যেকোন রান্নার কাজ দ্রুত সারা যায়।
মেহেদি হাসান শিমুল বলেন, অনেকের ধারণা বায়োগ্যাস তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যেহেতু গরুর গোবরের ব্যবহার হয়, তাই এই গ্যাস উৎপাদনের সময় হয়ত চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে অনেকেই বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে আগ্রহী হন না। কিন্তু এটি একদম ভুল ধারণা।
তিনি বলেন, বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়ই না বরং গন্ধ ছড়ানো রোধ হয়। তার ভাষ্যমতে, বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহার করা না হলে গরুর গোবর খোলা জায়গায় ফেলে রাখলে তা থেকে উল্টো দুর্গন্ধ ছড়াতো। কিন্তু প্লান্টে ব্যবহারের ফলে সেটি হয় না। কারণ প্লান্টে মুখ থাকে ঢাকনা দিয়ে আটকানো। এছাড়া গ্যাস তৈরির পর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে উন্নতমানের জৈব সার তৈরি হয়। সেগুলো কৃষি জমির পাশাপাশি পুকুরের মাছ চাষে ব্যবহার করা যায়।