ঘরের বাইরে মাস্ক বাধ্যতামূলক হলেও মানামানি নেই
সালমান হাসান: রেডজোন যশোরে করোনা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেও ১১ দফা নিদের্শনার কেউ তোয়াক্কা করছে না। উচ্চ সংক্রমণ শুরু হলেও চলছে স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাফেরা। জনসমাগমে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও মানছেন না অধিকাংশরা। বন্ধও হয়নি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঘিরে জনসমাবেশ। স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে চলাচল করেছে সব ধরণের গণপরিবহ। ফলে স¦াস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ‘অ্যাকশনের’ হুশিয়ারি শুধুমাত্র যেন নামকাওয়াস্তে একটি ঘোষণা। সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক শেষে ‘অ্যাকশনের’ হুশিয়ারি দেন স্বাস্থ্য সচিব।
এরই মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ায় ‘লাল অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যশোর। করোনার সংক্রমণ মাত্রা বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী এই জেলা। কিন্তু এটি নিয়ে সাধারণ মানুষজনের মত তাপউত্তাপ নেই প্রশাসনেও। এমনকি সংক্রমণ হারের বিবেচনায় যশোর রেডজোনে অর্ন্তভূক্ত হলেও বিষয়টি জানেন না দায়িত্ব সংশ্লিষ্টরা। টেলিফোনে যোগাযোগ করলে সিভিল সার্জন তপন কান্তি বিশ^াস বলেন, যশোর ইয়োলো জোন। এমনটি তিনি জানেন। তবে রেড জোন (লাল অঞ্চল) সেটির খবর এখনও পাননি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে খোঁজ-খবর নেবেন বলে জানান তিনি।
সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১২ জেলা উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ কার তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলো উচ্চ, মাঝারি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করা হয়। ঝুঁিকর মাত্রা বিবেচনায় রেড বা লাল, ইয়েলো বা হলুদ ও গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোরসহ ১২টি জেলা উচ্চ ঝুঁকিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে লাল। শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করছে অধিদপ্তর। উচ্চ ঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় থাকা জেলাগুলোতে এই হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম, সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার জেলার ১৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শতকরা হিসেবে সংক্রমণের ৩০ শতাংশ। জানতে চাইলে দপ্তরটির মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ বলেন, জেনারেল হাসপাতলে রেডজোনে বর্তমানে ১২ জন ভর্তি আছে। আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত বেডেরও সংস্থান আছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকাদানের নির্দেশনা থাকলেও ভিড় জমিয়ে চলছে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের টিকাদনে চলছে চরম অরাজকতা। গাদাগাদি ভিড়ে লম্বা লাইনে মাস্কবিহীন অবস্থায় টিকা নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পথ চলতি মানুষের বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক থাকছে না। বাস, ইজিবাইক, থ্রিহুইলার যাত্রীদের অধিকাংশই মাস্ক পড়ছেন না। অনেকের মাস্ক থাকলেও থুতনিতে ঝোলে। অথচ করোনা ঠেকাতে জারি করা ১১ দফায় স্পষ্ট বলা আছে ঘরের বাইরে বের হলে বাধ্যতামূলক মুখ ঢেকে মাস্ক পরার কথা। কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেই কোন প্রশাসনিক তৎপরতা। রেস্তোরাঁয় খেতে বসতে করোনা টিকার সনদ প্রর্দশনের বিধান জারি করলেও সেটি চালু হয়নি। রেস্তোরাঁয় বসে খেতে হলে এটি দেখানো লাগছে না। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও অধাধে চলছে। যশোর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলছে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিও।
সিভিল সার্জন তপন কান্তি বিশ্বাস জানান, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্বাস্থ্যবিধিসহ ১১ দফা নির্দেশনা প্রতিপালনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি কার্যকরে তাাগিদ দেয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক হুসাইন শওকত জানান, মাস্ক ব্যবহারের এখনও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। বাইরে বের হলে সবাই যাতে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করেন তার জন্য অভিযান চালানো হবে। মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য আজ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হবে। এছাড়াও ১১দফা নির্দেশনার প্রতিপালন যাতে ঠিক মত হয় সেটিও নিশ্চিত করতে তৎপরতার চালানো হবে।