নিজস্ব প্রতিবেদক
শোকের ভারে আজ নুয়ে পড়েছে যশোর। মা, মাটি ও মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করা আপসহীন নেত্রী, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে শোকে স্তব্ধ যশোরবাসী।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঘোষিত তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোকের প্রথম দিন আজ। এ শোক শুধু রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নেই; ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের ঘরে ঘরে, হৃদয়ের গভীরে। যারা ঢাকায় জানাজায় যেতে পেরেছেন, তারা রওনা হয়েছেন ভোরেই। আর যারা যেতে পারেননি, তারা নীরবে চোখের পানি ফেলছেন ঘরের কোণে, চায়ের দোকানে কিংবা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই যশোর শহরের বড় একটি অংশে দোকানপাট বন্ধ। বড়বাজার, চাঁচড়া,এমএম আলী রোড, চৌরাস্তার মোড়, আরএন রোড, দড়াটানা-সবখানেই অন্যদিনের চেনা কোলাহল নেই। রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল কম, ব্যক্তিগত গাড়িও হাতে গোনা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
চায়ের দোকান, বাসস্ট্যান্ড, অটোরিকশা স্ট্যান্ড-সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রে একটাই নাম-খালেদা জিয়া। মানুষের কণ্ঠে চাপা কষ্ট, চোখে ক্ষোভ আর আফসোস। কেউ বলছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা, কেউ আবার দীর্ঘ নির্যাতনের ভারে ভেঙে পড়া এক নারীর জীবনের শেষ অধ্যায় নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
যশোর সদর উপজেলার বারিনগর এলাকায় ফুটপাতে চা বিক্রি করেন ষাট ছুঁইছুঁই মফিজুর রহমান। জানাজায় ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তারও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। ভারী গলায় তিনি বলেন,
‘রাতে ঠিক করছিলাম ঢাকায় যাবো। কিন্তু সকালে উঠে বুকটা এমন ধরছিল যে বের হইতেই পারলাম না। মনে হইলো, আর সহ্য হয় না। উনি খুব সোজাসাপটা মানুষ ছিলেন। জীবনে রাজনীতির নামে কোনো হিংসা দেখাই নাই।’
তার দোকানে চা খেতে আসা এক ভ্যানচালক নাসির উদ্দিন বলেন,
‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। কিন্তু খালেদা জিয়ারে মানুষ হিসেবে ভালো লাগতো। উনার ওপর যা যা করা হইছে, ওইগুলা না হইলে হয়তো উনি আরও বাঁচতেন। এই কষ্ট মানুষ ভুলবে না।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে কথা হয় সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই দেশে অনেক নেতা দেখছি। কিন্তু এমন সহ্যশক্তি আর ধৈর্য্য খুব কম মানুষের আছে। খালেদা জিয়া নির্যাতন সহ্য করতে করতেই শেষ হইয়া গেলেন। বিচার দুনিয়াতে না হোক, আল্লাহর আদালতে সব হিসাব হবে।’
আজ যশোর যেন এক নিঃশব্দ শোকসভা। পতাকার অর্ধনমিত ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে আছে একটি জেলাÑনীরবে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। দেশের ইতিহাসের এক দৃঢ়, বজ্রকঠিন অধ্যায় শেষ হয়ে যাওয়ায় যশোরবাসী আজ শুধু বলছেÑ-“এ শোক শুধু দলের নয়, এ শোক মানুষের।”
