সুনীল ঘোষ: যশোরে বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন ঘাটতি নেই। তবে মাঝে মধ্যে বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। তাতেই গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। বেশ কয়েকজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রচ- গরমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাচ্ছে না। ক্ষুদ্র শিল্পেও তার প্রভাব পড়ছে।
এদিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) যশোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহক। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে দিন-রাত কাজ করছে তারা। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান দুই নির্বাহী প্রকৌশলী। মাঝে-মধ্যে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ কী, তারও ব্যাখা করেছেন উর্দ্ধতন এই দুই কর্মকর্তা।
যশোর শহরতলী নওয়াপাড়ার বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন অভিযোগে বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ইলেক্ট্রনিক্সের পণ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দিনে অনন্ত দুই দফা লোডশেডিং হচ্ছে বলেও জানান এই গ্রাহক।
বিসিক নগরী ঝুমঝুমপুরের ব্যবসায়ী মিল্লাত হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে নানাভাবেই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। চৈত্রের প্রখর রৌদ্র ও তীব্র দাবদাহে পোল্ট্রি খাবার মালিকরা চরম বিপদে আছেন। ভ্যাপসা গরমে অনেক মুরগী মারা যাচ্ছে। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মিশনপাড়ার অন্তু বিশ^াস জানান, আগের মতো লোডশেডিং নেই। কিন্তু দিনে দুই-একবার কিছু সময়ের জন্যে হলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়তে হচ্ছে।
যশোর ওজোপাডিকো’র সূত্রে জানা যায়, যশোরে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার। এরমধ্যে বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে ১৬ হাজার। প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা কমে এবং বাড়ে। এখন পর্যন্ত যশোরে ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ রয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১০ মেগাওয়াট বেশি। তা সত্বেও দিনে-রাতে দুই-একবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায় থেকে প্রতিদিনই এই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যা বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের দাবির সাথে মেলে না। এনিয়ে ওজোপাডিকো যশোর’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২ এর প্রধান দুই নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করা হয়।
বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম দৈনিক কল্যাণকে জানান, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি নেই। গ্রাহকদের চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ‘গ্যাস সংকট’ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘœ ঘটাতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে এই কর্মকর্তা জানান, ২১ মার্চ শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। শুধু যশোরেই না, সাগরের তলদেশে সাবমেরিন কেবল বিছিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষকেও বিদ্যুতের আওতায় আনতে পেরেছে সরকার। তিনি বলেন, এখন খরা মৌসুম। সেচ কাজে গভীর নলকূপ বিদ্যুতে চলছে। ছোট আকারে ভ্রাম্যমাণ ধানকল থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগীর খামার, যন্ত্রচালিত যানে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।
তিনি বলেন, গ্যাস পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বিদ্যুতের উৎপাদন। গ্যাস সংকটের কথা মাথায় রেখে এখনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। তাহলে বিদ্যুতের সংকট হবে না। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিষয়টি এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে এখনো খারাপ পর্যায়ে যায়নি ধারণা করছি।
ওজোপাডিকো যশোর’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ প্রধান বলতে রাজি হননি। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৫৪ হাজার। প্রতিদিনের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুতের সরবরাহ রয়েছে।
যশোর-১ ও মণিরামপুর-২ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তাদের চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে সূত্রে জানানো হয়, সংকট থেকে উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী হতে হবে।