
নিজস্ব প্রতিবেদক
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে যশোর-১ (শার্শা) সংসদীয় এলাকায়। দীর্ঘদিন পরে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় আনন্দ বিরাজ করছে তরুণ, যুবকসহ সব বয়সী মানুষের মাঝে। তবে ঘুরে ফিরে আলোচনা চলছে কোন দলের কে প্রার্থী হবেন। কার সম্ভাবনা বেশি। কার হাতে প্রতীক দিলে বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী কে হচ্ছেন- এই আলোচনাটি অবশ্য বিএনপি ঘিরেই বেশি। কারণ জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য নাম সর্বস্ব দলে একজন করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বিএনপিতে প্রচারণায় আছেন চারজন।
বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন। তারা ইউনিয়ন, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে বেশ আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কর্মী-সমর্থকরাও আড্ডা-আলোচনায় কিংবা ফেসবুকে পছন্দের নেতার পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর পৃথক প্রচারণার বিপরীতে একক প্রার্থী মাওলানা আজীজুর রহমানকে নিয়ে মাঠে আছে জামায়াতে ইসলামী। প্রকাশ্যে-গোপনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে জামায়াতের নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের ‘ম্যানেজ’ করে ভোট ব্যাংক বৃদ্ধি করছেন। অনেকের ধারণা এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বিএনপিকে। শুধু তাই নয় আসনটি বিএনপিকে দখলে নিতে হলে একজন স্বচ্ছ ও ইমেজধারী প্রার্থীর প্রয়োজন।
বিএনপির মাঠের কর্মীদের ভাষ্য, দল যার হাতে ধানের শীষ তুলে দিবে, নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন। তখন গণজোয়ার তৈরি হবে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রার্থী বাছাইয়ে। এখন যে চারজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী; এদের কেউ কেউ গত ৫ আগস্টের পর ফুলেফেঁপে উঠেছেন। চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি আর আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে ‘মালকড়ি’ টেনেছেন। যদি এধরনের নেতা দলের টিকিট পান তাহলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন। তবে যার বদনাম নেই তিনি মনোনয়ন পেলে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া দল। এ দলটি জনমানুষের কল্যাণে নিবেদিত। কোন অন্যায়, দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজিতে বিশ্বাসী নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার এসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন। যারা অপকর্ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও চাকরিতে যাইনি। ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপির আদর্শ লালন ও ধারণ করে রাজনীতিতে আছি। হত্যা মামলায় কারাবরণ করেছি। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পকেটের টাকা দিয়ে জামিন করিয়েছি। নির্যাতিতকর্মীদের খোঁজ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার জীবনে কোন অসততা নেই। ১৯৯৬, ২০০১ (পরে বদল করে), ২০০৬ (দল মনোনয়ন দেয়, যে নির্বাচন স্থগিত হয়), ২০১৮ সালে দল মনোনয়ন দেয়। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল মনোনয়ন দিলে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করবো ইনশাল্লাহ।
মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, প্রতিদিনই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১৭ বছর রাজপথে ছিলাম। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। কারাবরণ করেছি। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের খোঁজ নিয়েছি। জেলখানায় দেখতে গিয়েছি। ফলে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী। তবে দলের স্বার্থে যিনিই মনোনয়ন পাবেন তার জন্যই কাজ করবো।
একই কথা বলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু। তিনি বলেন, আমরা মনোনয়ন প্রত্যাশী চারজন প্রত্যেক ইউনিয়নে একসাথে মিটিং করেছি। নেতা-কর্মীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমরা ধানের শীষের পক্ষে। তাই যিনিই মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই নির্বাচনে অংশ নেবো। তিনি আরো বলেন, বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে আমি আছি। ১৭ বছর উপজেলা বিএনপির অফিস খোলার লোক ছিল না। আমি নিজে খুলে কার্যক্রম করেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন, আমি শার্শা, যশোর, ঢাকায় মামলার আসামি হয়েছি। কারাভোগ করেছি। কারাগারে থাকা কর্মীদের নিজের টাকায় জামিনের ব্যবস্থা করেছি। ছাত্ররাজনীতি থেকে বেড়ে উঠে শার্শা বিএনপির সেক্রেটারি হয়েছি। জনগণের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। সবকিছু বিবেচনা করলে দল আমাকে ধানের শীষ প্রতীক দিবে বলে বিশ্বাস করি। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকেই মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই নির্বাচন করবো।
এদিকে, গণঅধিকার পরিষদ খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল দলের প্রার্থী হতে পারেন। জানতে চাইলে আশিক ইকবাল বলেন, আমাদের দল থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। দল চাইলে আমি নির্বাচন করবো। তরুণরা পরিবর্তন চাই। আমরা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি।

 
									 
					