পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করে জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পাইকগাছার বাসাখালী গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা শেফালী। এক সময় যে শেফালীর অনাহারে দিন কাটতো, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো আজ সেই শেফালী এক জন স্বাবলম্বী নারী। বেড়েছে সামাজিক মর্যাদা।
এলাকার সবার কাছে ‘পানি আপা’ হিসেবে একনামেই পরিচিত শেফালী। মেধাবী হওয়া সত্তে¦ও বাবা খালেক সানার অভাব অনটনের কারণে এসএসসি পর্যন্ত পৌছাতে পারেননি শেফালী। বিয়ে হয় একই এলাকার মহসিন সানার সাথে। শেফালীর কাছ থেকে খরচ নিয়ে বিদেশে যায় মহসিন। প্রথম কিছুদিন খোঁজ নিলেও পরবর্তীতে শেফালীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মহসিন। একটা পর্যায়ে গিয়ে মহসিনের সাথে বিচ্ছেদ হয় শেফালীর। এরপর শুরু হয় শেফালীর সংগ্রামী জীবন। ৩টি সন্তান নিয়ে দুঃসহ জীবন কাঁটতে থাকে শেফালীর। নারীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প এলাকা পাইকগাছায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কের্ন্দের (ডিএসকে) মাধ্যমে এলাকার উপকারভোগীদের জন্য ৩ হাজার ২১২টি বসতবাড়ী ভিত্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। এ সব উৎস সচল রাখার জন্য জিসিএ প্রকল্প হতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজের পরিধি অনুসারে কমপক্ষে একজন নারী উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে। এই রক্ষণাবেক্ষণ নারী সেবাদানকারীকে জিসিএ প্রকল্প পানি আপা নামে অবিহিত করেছে। যিনি নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। প্রকল্পের আওতাধীন গড়ইখালী ইউনিয়নের ৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড। এ ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডে পানি আপা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় শেফালীকে। জিসিএ প্রকল্প থেকে শেফালীকে বিভিন্ন ধরণের অরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়। বাসাখালী, হোগলারচক ও কেচকিবুনিয়ায় ৪০০ পরিবারের বসতবাড়িতে বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস স্থাপন করা হয়েছে। এ সব উৎসে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ও সেবা প্রদান করা বাবদ প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে সম্মানি ফি বাবদ ২০ টাকা করে পান শেফালী। এতে এক দিকে পানির উৎসগুলো যেমন টেকসই হচ্ছে এবং সচল থাকছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেফালী। বাসাখালী গ্রামের উপকারভোগী মনিরা আক্তার সাথী জানান, পানি আপা শেফালীর মাধ্যমে আমাদের পানির উৎসগুলো সচল রয়েছে। আমরা তার মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংরক্ষণের অনেক ধারণাও লাভ করছি। একটা সময় পানির জন্য হাহাকার ছিল। এখন আর পানি নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
শেফালী বলেন, এক সময় আমার সংসার চালাতে গিয়ে খুব হিমশিম খেতে হতো। পানির উৎস রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে একদিকে আমার সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। সবাই যখন পানি আপা বলে ডাকে তখন নিজের মধ্যে দারুণ একটা ভালোলাগা কাজ করে। বর্তমানে সুন্দরভাবে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেদের ভালভাবে লেখাপড়াও করাচ্ছি। এখন আমার সংসারে অভাব অনটন নেই বললেই চলে।