জেমস রহিম রানা: যশোর জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন লাশকাটা ঘর মাদক সেবীদের নিরাপদ আঁখড়ায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সেখানে বসে মদ, ফেনসিডিল ও প্যাথিডিনসহ নানা ধরনের মাদকের আড্ডা। পরিত্যক্ত এই ঘরটি হাসপাতালের অভ্যন্তরে হলেও নির্জন এলাকায় হওয়ায় মাদকসেবীরা নির্বিঘ্নে সেখানে আড্ডা জমায়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব প্রান্তে পুরাতন লাশকাটা ঘরটি দীর্ঘদিন আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে সেখানে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশের। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই এই ভবনের চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। জনশূন্য হয়ে যায় গোটা এলাকা। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে সেখানে আড্ডা জমায় শহরের চিহ্নিত মাদক সেবীরা। তাদের ব্যাপারে কথা বলতেও সাহস পাননা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের ডোম অরুন কুমার বলেন, হাসপাতালের লাশকাটা ঘরটি সম্পূর্ণ নির্জন এলাকায় হওয়ায় সন্ধ্যার পরে এই এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। একান্ত কোন কাজ না থাকলে আমরাও কেউ সন্ধ্যার পরে এখানে থাকি না। তাছাড়া পুরনো লাশকাটা ঘরের চারপাশে জঙ্গলে পূর্ণ হয়ে গেছে। এই ঘরগুলোতে কোন জানালা দরজা নেই। ভেতরে কেউ গেলে বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না। ফলে মাদকসেবীরা সহজেই নিরাপদ মনে করে এই যায়গাটিকে। পরিত্যক্ত ঘরগুলো ভেঙ্গে ফেলার জন্য কর্তৃপক্ষকে বহুবার তাগাদা দেয়া হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
ডোম বিপুল দাস জানান, মাদকসেবীরা সবাই বহিরাগত। সন্ধ্যার পরে লাশকাটা ঘরের আশেপাশে কেউ না থাকার সুযোগে তারা বাইরে থেকে নেশার সামগ্রী এনে পরিত্যক্ত ঘরে গিয়ে সেবন করে। প্যাথেডিন ইনজেকশন হাসপাতালে সামনের অধিকাংশ ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের দালালদের মাধ্যমে তারা এগুলো সংগ্রহ করে এই পরিত্যক্ত ভবনের মধ্যে গিয়ে শরীরে পুশ করে। আমরা অনেক সময় তাদের দেখে তাড়া করলে পরে আমাদেরকে হুমকির মধ্যে থাকতে হয়। কতৃপক্ষকে অনেকবার এবিষয়ে জানানো হলেও কোন সুফল পাওয়া যায় না। আগে বাইরের কিছু লোক ঘোপ সেন্ট্রাল রোড থেকে কর্মচারী ইউনিয়নের পরিত্যক্ত ভবনের দরজা দিয়ে ভিতরে মাদকদ্রব্য পাচার করতো। যা পেছনের দরজা বন্ধ করে দেয়ায় এখন বন্ধ হলেও সামনে দিয়ে লোকেরা নিয়ে আসে। যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
ঘোপ জেলরোড এলাকার ডিআইজি রোডের বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, হাসপাতালে রোগি থাকায় সার্বক্ষণিক এখানে থাকতে হয়। আমি দেখেছি সন্ধ্যার পরে লাশকাটা ঘরের পাশেও কোন লোক না থাকলেও পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে কিছু যুবক ছেলেরা ঘোরাফেরা করে। বিশেষ করে আমার এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে এখানে ঘোরাফেরা করে। যারা নেশাগ্রস্থ এবং নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িত।
তিনি হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষায় পরিত্যক্ত ভবনগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলার দাবি জানান।
আব্দুস সালাম নামে এক রোগির আত্মীয় বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকার সুবাদে প্রায় সপ্তাহ খানেক এখানে রয়েছি। হাসপাতালের বাইরে বসার জায়গা না থাকায় পাশের গাছের গুড়িতে বসে সময় কাটাই। সন্ধ্যার পরপরই কিছু নেশাখোর প্রকৃতির লোক এখানে আনাগোনা করতে দেখা যায়। তারা কাউকে তোয়াক্কা করেনা। তাদের চলাফেরা সন্দেহজনক হওয়ায় আমি নিজেও কয়েকবার তাদের বিষয়ে এখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যসহ ড়োমদের জানিয়েছি। আজ পর্যন্ত তার কোন সমাধান পাইনি।
হাসপাতালের সুপার ডা. আখতারুজ্জামান জানান, পরিত্যক্ত লাশ কাটা ঘরে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসে কি না জানা নেই। তবে নির্জন ওই এলাকাটিতে সন্ধ্যার পরে কোন জনমানব থাকে না।
তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ঘরগুলি ভেঙে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানানো হয়েছে। আজও কোন সুরাহা হয়নি। তারপরও বিষয়টি দেখবো।