ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে রেবা খাতুন নামে এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সে প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে সহপাঠিদের সাথে স্কুলে যায়। কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়া হয়নি তার। বেলা ১১ টার দিকে স্কুল থেকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। তবে আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে নাকি শারীরিক অন্য কোন অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি চিকিৎসকরা। মৃত রেবা খাতুন সদর উপজেলার উত্তর সমশপুর গ্রামের সাগর হোসেনের মেয়ে এবং হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
এ ঘটনায় ফারজানা, আসমা, সুমাইয়া ও উর্মিলা নামের আরো চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্কুল ছাত্রী মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রতি সাত দিন পর পর এক জন শিক্ষার্থীকে একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে।
মৃত রেবা খাতুনের সহপাঠি জান্নাতুল বলে, সকালে হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সকল শ্রেণির ছাত্রীদের একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ান শিক্ষকরা। এর কিছুক্ষণ পর ১১ টার দিকে রেবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আমরা বাজারের একটি ওষুধের দোকানে নিলে তারা দ্রুত সদর হাসপাতালে নিতে বলেন।
হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেবাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর সহপাঠি সামিন বলে, আমরা রেবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় কোন শিক্ষক ছিল না। তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ওকে নিয়ে কি করবো। একপর্যায়ে দিশেহারা হয়েই হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে একজন সংবাদ কর্মীর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে রেবার বাড়ি ও স্কুলে জানাই সে মারা গেছে।
রেবার মা স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। আমার দুইটি মেয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ে রেবা ও ছোট মেয়ে মুসলিমা খাতুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে স্কুলে যায় রেবা। এরপর খবর পায় একটি ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে রেবা। তখন স্কুলে ছুটে গিয়ে দেখি সেখানে মেয়ে নেই। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে।
হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ট্যাবলেট খাওয়াতে। সেভাবেই খাইয়েছি। এখানে আমাদের কোন গাফিলতি ছিল না। তবে কি কারণে সে মারা গেছে তা জানিনা।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব জানান, মেয়েটিকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ক্লিনিক্যাল কিছু স্যাম্পল পাওয়ার পরই বলা যাবে কেন তার মৃত্যু হয়েছে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, সাধারণত আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে কেউ মারা যায় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে শুধু পেটে ব্যথা কিংবা অ্যাসিডিটি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে সে আগে থেকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিল কি না সেটা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়না তদন্ত করা হবে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে।