নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা ৪র্থ দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছে যশোর পৌরসভার হরিজন সম্প্রদায়েরা। যার ফলে শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লার ভাগাড়ে রূপ নেওয়া চিত্রের পরিবর্তন হয়নি। যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় ময়লা নেওয়া শুরু করলেও বেশিরভাগ জায়গায় ময়লার স্তুপ রয়েছে। দিনের পর দিন সড়কের উপর এভাবে ময়লার স্তুপ থেকে পশু-পাখি ময়লা হাঁচড়ানোয় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পথচারীদের মুখে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, পরিচ্ছন্ন শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে যশোর পৌরসভা শ্রমিক সংগ্রাম পারিষদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের কাছে তারা স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর আগে শত শত পরিচ্ছন্নকর্মী জেলা প্রশাসকের কালেক্টরেট চত্বরে কিক্ষোভ করেন।
আন্দোলনরত হরিজনরা জানিয়েছেন, যশোর পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে পাঁচ শতাধিক হরিজন কাজ করে থাকেন। এরা শহরের বড় বাজার, রেলবাজার ও তালতলা এলাকায় বসবাস করেন। পূর্বপুরুষদের পেশা হিসাবে তারা পৌরসভায় পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ করে আসছেন। দিনে দিনে সবকিছুর উন্নতি হলেও তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা তারা পাননা। পৌরসভা থেকে জায়গা দিলেও ঘর করে দেয়নি। দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে তারা কাজ করেন। তাদের পূর্বপুরুষরা কখনও বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। পৌরসভা বিদ্যুৎ বিলের ব্যয়ভার বহন করত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি রেলস্টেশন হরিজন কলোনীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই ঘটনার পর তারা আন্দোলনে নামেন। আর গত পাঁচদিন ধরে তাদের কাজ বন্ধ রাখে। বৃহস্পতিবার ৪র্থ দিনের মত কাজ বন্ধ করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হরিজন নেতা মতিলাল বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের সাথে পৌর মেয়র কোনো আলোচনা করেননি। দাবি না মেনে নিলে তারা কাজ করবেন না। কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। এদিকে, গত চারদিন ধরে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় গোটা শহর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। হরিজনরা গত চার দিন ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে রেখেছেন তারা। এতে বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তুপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সাধারণ পথচারীরা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাচল করতে পারছেন না।
শহরের দড়াটানা এলাকায় কথা হয় পথচারী ইকরামুল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আজ ৪ দিন ধরে শহরের সব এলাকায় ময়লার স্তুপ। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও রাস্তার সর্বস্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অপর একজন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদুল আলম বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে শহরের সব এলাকায় যাওয়া হয়। সব জায়গায় দেখলাম একই রকম ময়লা পড়ে আছে গরু ও কুকুরে ময়লা নিয়ে টানাটানি করছে। যার কারণে সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত চারদিন ময়লা এক জায়গায় থাকার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রাস্তায় চলাফেরার উপায় নেই।’ এদিকে, যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরণ লালা সরকার বলেন, ‘আমরা আজ জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছিলো দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করে দেবে। কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে তারপরও বিদ্যুৎ লাইন আসেনি। তিনি আরো বলেন, আগে শুধুমাত্র রেলস্টেশন হরিজন পল্লীর বিদ্যুৎ লাইন বিছিন্ন থাকলেও এখন ঢাকা রোড হরিজন পল্লী ও পুরাতন পৌরসভার হরিজন পল্লী এ দুটি এলাকায় আজ সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমরা আবার একটা সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়।’
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, ‘কয়েক দিনের ময়লার স্তুপ। এ কারণে দু এক দিন সময় লাগবে ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে। তিনি বলেন, পৌরসভার তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সকল ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। আগামীকালকের ভিতরে সকল ময়লা পরিষ্কার করা হবে। তিনি আরও বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের যারা পরিচ্ছন্নতার কাজ করে তাদের কোন বেতন বাড়ানো হবে না ও বিদ্যুতের টাকা এরপর থেকে পরিশোধ করতে হবে।