একদিনের লোকসান সাত দিনেও তোলা যাচ্ছে না
কেউ পরোটা ছোট-পাতলা করছেন কেউ বা দাম বাড়াচ্ছেন
বাজার জুড়ে অস্থিরতা
সালমান হাসান: সয়াবিনের দাম বৃদ্ধির ফলে অস্থির খাবারের হোটেলের ব্যবসা। দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে জোর টানাপোড়েন। তেলে ডুবছে হোটেল রেস্টুরেন্ট। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধিতে লোকসানের মুখে পড়েছে সেক্টরটি। তেলেভাজা খাবার বিক্রির ব্যবসারও নাস্তানাবুদ দশা।
তবে ক্রেতারা বলছেন, আকৃতি বেড়েছে একটুখানি। অথচ দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাদের পকেট কেটে চলছে বাড়তি দাম উশুল। মোটর শ্রমিক শুকুর আলী বলেন, কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়। ফলে খাবারের জন্য হোটেল রেস্টুরেন্টই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেখানে খাবার খাওয়াটাই এখন সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
তিনি জানান, শহরের চাঁচড়া চেকপোস্টের পাশে একটি হোটেলে ডাল ও ভাজি দিয়ে তিনটি পরোটা খাওয়ার পর বিল ধরা হয় ৪০ টাকা। দাম শোনার পর তার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। বেশি দামের কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়ানো হয়েছে পরোটার দাম। তিনি বলেন, এক ধাক্কায় দাম দ্বিগুণ বাড়লেও পরোটার আকৃতি বেড়েছে একটুখানি। একেকটি পরোটার দাম এখন দশ টাকা।
আবার কারো কারোর ভাষ্য, অনেক হোটেল দাম না বাড়ালেও পরোটার আকৃতি ছোট করে ফেলেছে। অনেক দোকানে পরোটা বানানো হচ্ছে একদমই পাতলা। মেলে ধরলে পরোটার ভেতর দিয়ে অপর সামনের মানুষের চেহারা দেখা যাবে। এমনটা বলছিলেন, মুকুল হোসেন নামে শহরের খড়কির এক বাসিন্দা।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত তারা খাবারের দাম বাড়াননি। কিন্তু এভাবে আগের দামে বিক্রি করতে থাকলে পথে বসতে হবে। একমাত্র ভাত বাদে সব খাবার তৈরিতে দরকার হয় ভোজ্য তেল। যেটির দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। যেটি তাদের বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। বাধ্য হয়েই এবার তাদের খাবারের দাম বাড়াতে হবে।
যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার-পিঁয়াজু, বেগুনি, ফুলুড়ি, পুরিসহ বিভিন্ন ধরনের চপের দাম বেড়ে গেছে। স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল হালিম জানান, তিন টাকার সিঙ্গাড়ার দাম বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা। ৩ টাকার দামের বেগুনি, আলুর চপ, পুরির দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫টাকা। আকৃতি সামান্য একটু বাড়িয়ে এগুলোর দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে যশোরের অভিজাত ও বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো এখনও পর্যন্ত খাবারের দাম বাড়ায়নি। কিন্তু তেলের এই দাম বৃদ্ধির মুখে দাম না বাড়িয়ে কতদিন ব্যবসায় চালাতে পারবেন সেটি নিয়ে সন্দিহান তারা। মুজিব সড়ক রোডের ক্যাফে প্রেসক্লাবের ম্যানেজার আজাদ হোসেন বলেন, এখনও কোন খাবারের দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে বেচাকেনা থেকে লাভ দেখাই মুশকিল। দাম না বাড়িয়ে এভাবে ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, প্রায় প্রতিদিনই লোকশান গুণছে তাদের প্রতিষ্ঠান। একদিন বিক্রি কম হলে সারা সপ্তাহেও সেই লস তোলা যাচ্ছে না।
সিটি প্লাজা রুফটপ গার্ডেন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা আগের রেটেই খাবার বিক্রি করছি। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ওই দামে খাবার বিক্রি করে প্রফিট হচ্ছে না।
মণিরামপুরের পলাশি মোড়ের হোটেল ব্যবসায়ী রিপন হোসেন বলেন, এখনও পর্যন্ত কোন কিছুর দাম বাড়াননি। তবে লুচি, পরোটা, পুরি, সিঙ্গারার মত খাবারের আকৃতি কিছুটা ছোট করেছেন। যাতে তেলের দাম বৃদ্ধির মুখে লোকসান এড়ানো যায়। তিনি জানান, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের দাম। প্রতিদিনই এই দাম বাড়ছে। ফলে তেলেই এবার ডুববে তার হোটেলে ব্যবসা।