এক বছরেরও বেশি সময় আগে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ৪৯ হাজার ১৬২ জন অবৈধ নদ-নদী দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। ধনী-দরিদ্র, রাজনীতিক-ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি-সাধারণ মানুষসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই অবৈধভাবে নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিমন্ত্রীর এ কথার বাস্তব চিত্র ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদী। এ নদীর অধিকাংশই দখল হয়ে গেছে। দখলদাররা গড়ে তুলছে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেকে আবার নদীর ভেতরেই অনায়াসে চালিয়ে যাচ্ছে চাষাবাদ। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
শুধু যে প্রভাবশালীরা নদীটি দখল করেছে, তা নয়। প্রভাব-প্রতিপ্রত্তি নেই এমন লোকও নদী দখল করছে। দু’পাড়ের বাসিন্দারাও দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যে যেভাবে পারছে দখল করেছে। দেশের অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রেও একই চিত্রের দেখা মেলে।
চিত্রা নদীও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দখল করে আছে। দখলের এ চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও এ নদের অস্তিত্ব যেখানে আছে সেখানেই দখল হয়ে গেছে। অবস্থাটা এমন যে অদূর ভবিষ্যতে চিত্রার আর কোনো নাম-নিশানা থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্বিশেষে সজ্ঞানে নদী দখলে শামিল হওয়ার পেছনে কারও কোন দায় রয়েছে কিনা। দেশে যখন নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, তখনই মূলত এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। নদী রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি চোখে পড়ে না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেই।
নদী দখল নিয়ে শুধু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই কর্তৃপক্ষ একটু নড়েচড়ে বসে। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। সীমানা পিলারও নির্ধারণ করে। এর পর আর দেখভাল করতে দেখা যায় না। সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে দখল হয়ে যায়। দখল হয়ে যায় নদীর সীমানা পিলারও।
নদী দখলের এমন দুষ্ট-চক্রের স্থায়ী অবসান ঘটাতে হবে। দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সবার কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে হবে যে, নদী দখল করলে পার পাওয়া যাবে না। নদী দখলদার যেই হোক না কেন তাদের কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাহলে হয়তো নদী দখলের অপসংস্কৃতি রোধ করা যাবে, নদীগুলো রক্ষা পাবে।