ঢাকা অফিস
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন তালিকায় বড় ধরনের রদবদল করছে বিএনপি। সোমবার রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে—যেখানে লন্ডন থেকে যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—বিতর্কিত ও সমালোচিত প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সিলেট-৬, নেত্রকোনা-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, জামালপুর-২, কুষ্টিয়া-৪, সিরাজগঞ্জ-৩, চট্টগ্রাম-১২ ও ১৩সহ কমপক্ষে ৩০টি আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলা হয়। সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, বয়সজনিত অক্ষমতা, অতীত বিতর্ক ও নেতিবাচক জনমতের অভিযোগ স্থায়ী কমিটির নেতারা দৃঢ়ভাবে উত্থাপন করেন।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই বিএনপির ভেতরে ‘মনোনয়ন বিদ্রোহ’ দেখা দেয় অর্ধশতাধিক আসনে। বাকি ৬৩ আসনেও যোগ-বিয়োগের হিসাব এখনো চলছে।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ : জেন-জির জন্য বিশেষ প্রচারণা
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বড় আকারের রাজনৈতিক যোগাযোগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে—‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শিরোনামে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে জেন-জি প্রজন্মকে লক্ষ্য করে এ কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। ৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণার আয়োজন থাকবে।
দলীয় সূত্র জানায়, একটি আধুনিক, নিরাপদ ও ভবিষ্যৎমুখী বাংলাদেশ গড়তে সাতটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি—
জলবায়ু ও পরিবেশ, শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী, ক্রীড়া ও ধর্ম।
ক্ষমতায় এলে এসব বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা লিফলেট ও প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি বিশেষ টিম শিগগিরই মাঠে নামবে।
স্থায়ী কমিটির আলোচনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান—ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থান নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। নেতারা জানান, কয়েক বছর ধরেই তিনি গুরুতর অসুস্থ। কারাজীবনে সরকার-নিয়ন্ত্রিত নির্যাতন ও চিকিৎসায় বাধা তাঁর শারীরিক অবনতি আরও বাড়িয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
স্থায়ী কমিটির নেতাদের মতে, ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে নেওয়াই তাঁর সাম্প্রতিক সংক্রমণের অন্যতম কারণ হতে পারে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও আলোচনা
বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা, রাজনৈতিক পরিণতি ও কৌশলগত প্রভাব নিয়ে নেতারা মতবিনিময় করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
