ঢাকা অফিস
সবকিছু ঠিক থাকলে আর মাত্র এক দিন পরই দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর সঙ্গে ফিরছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা জাইমা রহমান। জুবাইদা রহমান সম্প্রতি ঢাকায় এলেও, জাইমা রহমানের এ ফেরা দীর্ঘ ১৭ বছর পর—যা ঘিরে পরিবার ও রাজনীতির অঙ্গনে তৈরি হয়েছে বিশেষ আবেগ ও কৌতূহল।
দেশে ফেরাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্ট দেন জাইমা রহমান। পোস্টটি বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়। সেখানে তিনি স্মরণ করেন তাঁর ‘দাদু’—বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে; পাশাপাশি তুলে ধরেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও দেশে ফিরে ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা।
‘লাখো মানুষের প্রধানমন্ত্রী, আর আমাদের দাদু’
জাইমা রহমান লেখেন, দাদুকে নিয়ে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি হলো—পরিবারকে আগলে রাখা একজন মমতাময়ী অভিভাবক হিসেবে তাঁকে দেখা। ছোটবেলার একটি স্মৃতি তুলে ধরে তিনি জানান, মাত্র ১১ বছর বয়সে স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে মেডেল জয়ের পর মাকে সঙ্গে নিয়ে সরাসরি দাদুর অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। গোলকিপার হিসেবে নিজের সাফল্যের গল্প উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন, আর দাদু গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন—এই স্মৃতি আজও তাঁর মনে গেঁথে আছে।
জাইমা লেখেন,
“লাখো মানুষের কাছে তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি ছিলেন শুধু ‘দাদু’—আমাদের দাদু। যিনি সময় বের করতেন, খেয়াল রাখতেন, আমাদের ছোট ছোট সাফল্যেও গর্ব অনুভব করতেন।”
নেতৃত্বের প্রথম পাঠ পরিবার থেকেই
এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো থেকেই নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার প্রথম শিক্ষা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন জাইমা রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরে কাটানো ১৭ বছর তাঁর জীবনকে অনেকভাবে বদলে দিলেও নিজের শিকড় কখনো ভুলে যাননি।
“লন্ডনের দিনগুলো আমাকে বাস্তববাদী করেছে, দিয়েছে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমার হৃদয়-মন সবসময় বাংলাদেশেই ছিল,”—লেখেন তিনি।
আইন পেশা আর মানুষের গল্প
নিজের পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জাইমা রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে, আর মানুষের সঙ্গে কাজ করা শিখিয়েছে দায়িত্বশীল হতে। আইন পেশায় কাজ করতে গিয়ে মানুষের জীবনসংগ্রাম, অবহেলা ও ন্যায়বিচার বঞ্চনার গল্প তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
“কারও জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনে পাশে দাঁড়ানোর যে শিক্ষা, তা কোনো ক্লাসরুম দিতে পারে না,”—লেখেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের আদর্শ, পরিবারের দায়বদ্ধতা
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে জাইমা রহমান বলেন, তিনি দাদাকে কখনো দেখেননি, কিন্তু সততা ও দেশপ্রেমের গল্প শুনেই বড় হয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সেই আদর্শই বহন করে চলেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্টের আগে-পরে সময়গুলোতে নেপথ্যে থেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখার কথাও জানান জাইমা।
‘দেশে ফেরা মানে আবেগের অনন্য সংমিশ্রণ’
অনেক বছর পর দেশে ফেরার অনুভূতি তুলে ধরে জাইমা রহমান লেখেন,
“দেশে ফেরা মানে আবেগ আর অনুভূতির এক অনন্য সংমিশ্রণ।”
তিনি বলেন, দেশে ফিরে ইনশাআল্লাহ দাদুর পাশে থাকতে চান, বাবাকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চান এবং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চান।
নতুন করে বাংলাদেশকে জানার প্রত্যয়
নিজের চোখে, নিজের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশকে নতুন করে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে জাইমা রহমান লেখেন, মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চান তিনি। বাংলাদেশ যেন আবারো সামনে এগিয়ে যায়, গর্জে ওঠে—এটাই তাঁর প্রত্যাশা।
পোস্টের শেষাংশে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর পরিবারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা ও কৌতূহল রয়েছে—কখনো তা আশার, কখনো প্রশ্নের। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়ভারও তাঁরা গভীরভাবে অনুভব করেন।
