স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরে এসেও এ দেশে বহু মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এটি অত্যন্ত লজ্জাকর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে সেই দুঃখ আর লজ্জা ঘোচানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ দেশে কোনো ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আট লাখ ৮২ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর ও জমি দেয়ার বিশাল উদ্যোগ নেয়া হয়।
কাজও এগিয়ে চলে অতি দ্রুত, কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এই মহতী উদ্যোগের মধ্যেও কিছু লোভী মানুষের হস্তক্ষেপ হতে থাকে। অনেক জায়গায় ছয় মাস না যেতেই হস্তান্তর করা ঘরে ফাটল দেখা দেয়। ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। এমন অভিযোগে বেশ কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ওএসডি করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের বিস্তারিত তদন্তের পর তাদের একজনের বেতন গ্রেড কমিয়ে দেয়া হয় এবং একজনকে ‘তিরস্কার’ করা হয়। একজনের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। বাকিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও দেশে প্রচুর সংখ্যায় ভূমিহীন, গৃহহীন ও ভাসমান মানুষ থাকাটা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে ম্লান করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী, কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পই নয়, এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য প্রকল্পেও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বীর নিবাস বরাদ্দ পান নেত্রকোনার মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের মান্দাউরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল তালুকদার, কিন্তু ঘর নির্মাণের কিছুদিন পরেই ঘরের সামনের অংশ ভেঙে যায়। দরজা ভালো করে তৈরি না করায় বৃষ্টি এলেই ঘরের ভেতরে পানি ঢোকে। স্থানীয় প্রশাসন মতিলালের বীর নিবাসের কোনো খোঁজই রাখেনি। বীর নিবাসে লাগানো নামফলকের তথ্যানুযায়ী, কাজটি বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), কিন্তু কোন অর্থবছরে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে, সে তথ্য নেই।
দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় আড়াই হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এখনো এ দেশে বহু মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না, এমনটা হতে পারে না। হওয়া উচিতও নয়। গৃহহীন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের যেসব প্রকল্প ও কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিটি ঘটনা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।