দিনযাপনের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে করোনা
সালমান হাসান: হিমঋতুর জটাজাল ভেঙে যায় যায় করছে শীত। প্রকৃতির খোঁপায় ফাগুন রাঙানো ফুলে ভরে উঠছে দিগবিদিক। কখনও কখনও হঠাৎ শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহুতান। শীতের বারান্দায় হেলান দিয়ে আছে ঋতুরাজ বসন্তকাল। কিন্তু দিনযাপনের সব আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে কভিডকাল। ফাল্গুনে চারপাশ রঙিন হতে শুরু করলেও যশোরে এবারও হচ্ছে না বসন্ত উৎসব। ঋতুরাজের বন্দনায় থাকছে না কোন বিশেষ আয়োজন। করোনার সংক্রমণ উর্ধমুখী থাকায় পয়লা ফাল্গুনে বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি জেলার কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন। ভার্চুয়াল প্লাটফরমেও নেই তেমন কোন আয়োজন।
তবে দুই একটি সংগঠন ভার্চুয়াল মিডিয়ায় ফাল্গুনী উৎসবের প্রস্তুতি নিলেও অধিকাংশের সেরকম কোন উদ্যোগ নেই।
জানা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জনসমাগমে বিধিনিষেধ থাকায় বসন্ত উৎসব আয়োজনের সিধান্তই নিতে পারেনি বেশির ভাগ সাংস্কৃতিক সংগঠন। ফলে বন্দনাবিহীন দিন পাড়ি দিতে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক রাজধানী যশোরের মানুষজন। পৌর উদ্যানের সবুজ চত্বর, মুন্শি মেহেরুল্লাহ ময়দানের শতাব্দী বটতলসহ খোলা ময়দানের কোথায় শোনা যাবে না বসন্তের আবাহনী সুর।
উদীচী যশোর বরাররই বসন্তবরণ উৎসব ঘিরে করে থাকে বর্নিল সব আয়োজন। কিন্তু সংগঠনটি ফাল্গুনী উৎসব ঘিরে এবছর কোন কর্মসূচি হাতে নেয়নি। জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, জনসমাগমের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নতুন করে সরকারি নির্দেশনা দেয়া হয়নি। অনুমতি না থাকায় বসন্তবরণ উৎসবের সে রকম কোন আয়োজন করা হয়নি। তিনি জানান, উদীচী মিলনায়তনে সীমিত পরিসরে ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে। সেই উদ্দেশ্যে মহড়াও চলছে। কিন্তু সেটিরও চূরান্ত সিধান্ত হয়নি। তবে শুধুমাত্র শিল্পীদের উপস্থিতিতে বসন্তবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনের ফেসবুক পেজে লাইভ প্রচারের বিষয়ে ভাবনা রয়েছে। বৈঠক করে সেটির সিধান্ত নেয়া হবে।
পুনশ্চ যশোরের সাধারণ সম্পাদক পান্না লাল দে জানান, শুধুমাত্র শিল্পীদের উপস্থিতিতে ফেসবুক লাইভে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বির্বতন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল জানান, ২২ জানুয়ারি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটক কৈবর্তগাঁথা মঞ্চায়নের দিনক্ষণ ঠিক ছিলো। কিন্তু করোনার সংক্রমণের কারণে শো-বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার কোন প্লাটফরমেই বসন্তবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি না।
তবে শুধুমাত্র সুরধুনী সংগীত নিকেতন এবছর ভার্চুয়াল প্লাটফরম ফেসবুকে বসন্তবরণ উৎসব লাইভে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদ হাসান বুলু বলেন, সংগঠন মিলনায়তনে শিল্পীরা বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করবে। সেখানে শুধুমাত্র শিল্পীরা থাকবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শেকড়ের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু জানান, খোলা ময়দানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি নেই। তাই বাড়ির উঠোন থেকে ফেসবুক লাইভে এসে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান করবেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস জানান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রশাসনের কাছে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ও নিষেধাজ্ঞার কারণে সংশ্লিষ্টরা অনুমোদন দেননি।