রায়হান সিদ্দিক: চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস, গলাগলি, আনন্দাশ্রু, হৈ-চৈ, লাফালাফি, চিৎকার-চেঁচামেচি-বলা যায় প্রাণখোলা, আবেগময়, নির্মল আনন্দ। আনন্দের সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এ দৃশ্য খুলে দেয়া স্কুল চত্বরের। এই আনন্দে শিক্ষার্থীদের সাথে শরিক হয়েছিলেন যশোরের শিক্ষক-অভিভাবকরাও।
প্রায় দুই বছর পর মঙ্গলবার প্রাক-প্রাথমিক স্তর খোলায় শিশুদের কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে নেমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে সবার মাঝে ছিল আনন্দের বন্যা। শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। অনেক দিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পেরে ঈদের দিনের মতো খুশিতে মেতে ছিলো শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীকে পেয়ে একে অপরের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
দীর্ঘ সময় পর সহপাঠীদের পেয়ে বেজায় খুশি অক্ষর শিশু শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থী অদ্রিতা। স্কুল প্রাঙ্গণ জুড়ে বন্ধুদের নিয়ে দৌড়ঝাঁপ আর খেলায় মেতে ছিলো সে। মঙ্গলবার এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে প্রায় সব প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে দেখা মেলে আনন্দের উচ্ছ্বাস। যেনো একদল পাখি মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ছে।
শিশুদের আনন্দ উল্লাস দেখে অভিভাবকরাও আনন্দিত। তারা বলেন, অন-লাইন ক্লাস ও ঘরে থেকে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে গেছে। ওদের এমন অবস্থা দেখে আমরাও চিন্তিত ছিলাম অবশেষে সেই বন্দী জীবন থেকে মুক্তি মিললো।
পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও। তারা বলেন, দীর্ঘদিন পর সরাসরি শ্রেণি কক্ষে পাঠদান শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। যথাযথ বিধি মেনেই আমরা পাঠদান শুরু করছি। তাই অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে সবার মাঝে। আশা করি এখন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলবে। আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা স্তরের প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু বন্ধ থাকে প্রাক-প্রাথমিক স্তর। চলতি বছরের শুরুতে সংক্রমণ ফের বেড়ে গেলে ২১ জানুয়ারি থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। অবশেষে দুই বছর পর প্রাক-প্রাথমিক স্তরে সশরীরে ক্লাস শুরু হলো। তবে প্রাথমিকভাবে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শুধু রবি ও মঙ্গলবার সরাসরি ক্লাসে আসবে ছোট্ট শিশুরা।