নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা ছাত্রদলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফার বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাৎ এবং ভিডিও ফাঁসের হুমকির অভিযোগ আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের বক্তব্য থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ভুক্তভোগী মাহিনুর আক্তার মাহি। থানায় মামলার একদিন পরেই সংবাদ সম্মেলনে জানালেন চাপের মুখে পরে তিনি মামলা করেছেন। এবার সরাসরি তিনি অভিযোগের তীর ছুঁড়লেন যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বিএম আকাশ এবং শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল হক সুমনের দিকে। রোববার (২৫ মে) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহিনুর অভিযোগ করেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন রাফা। আর তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের প্রেমের সম্পর্ক যে ফাটল ধরেছিল, তার মীমাংসা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মাহিনুর আক্তার মাহি জানান, তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা এবং ঢাকায় পড়াশোনা করেন। ছাত্রদল নেতা রাফার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ২৩ মে সন্ধ্যায় রাফাকে ‘সারপ্রাইজ’ দিতে তিনি হঠাৎ যশোরে আসেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে তিনি মনিহার এলাকায় পৌঁছান এবং রাফার বাসায় যান। তবে তিনি আগে থেকে রাফাকে কিছু জানাননি। বিষয়টি রাফা মেনে নিতে পারেননি। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তাকে ফোন করেন মঞ্জুরুল হক সুমন। তাকে জানানো হয়, রাফা তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করতে পারে। তাই ধর্মতলায় একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। একইসাথে যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম আকাশ হোসেন বিজয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। অন্যথায় নানা হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মাহিনুর প্রাণের ভয়ে কোতোয়ালি থানায় আশ্রয় নেন।
থানায় আসার পর বিএম আকাশ ও সুমন তার সাথে কথা বলেন। মাহি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাফার বিরুদ্ধে মামলা করাতে বাধ্য করেন তারা। কোতোয়ালি থানা পুলিশও তাদের সাথে যোগ দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। একপর্যায়ে চাপের মুখে পড়ে তিনি রাফার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হন। মাহি দাবি করেন, রাফার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে সুমন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বিএম আকাশ তাকে ব্যবহার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাফার সাথে তার প্রেম ছিল, আছে এবং থাকবে। রাফার কোনো দোষ নেই বলেও তিনি স্বজ্ঞানে স্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে রাফার ছোট বোন সাদিয়া সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন এবং মাহির বক্তব্যের পক্ষে সহমত পোষণ করেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম আকাশ হোসেন বিজয় জানান, তিনি দুই দিন যশোরে ছিলেন না। এ বিষয়ে সরাসরি দেখাও হয়নি। মূলত তিনি জানতে পারেন, একজন নারী সমস্যায় পড়েছেন। তিনি সহযোগিতা চান। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছেন। তবে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছে, এটা মিথ্যা। এ বিষয়ে তিনি নিজেও সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান।
অভিযোগের বিষয়ে মঞ্জুরুল হক সুমন বলেন, ঢাকা থেকে মাহিনুরের চাচাতো ভাই ফোন করে জানায় রাফা নামে একটি ছেলে তার বোনের সাথে প্রতারণা করেছে। বিষয়টি দেখার জন্য। তারই প্রেক্ষিতে আমি মেয়েটিকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। আর এখন সে যে অভিযোগ গুলো দিচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান জানান, মেয়েটি মামলা করেছিলো, এখন হয়তো মিনিমাইজ হয়ে গেছে। আপোষে হয়তো সে তার কাঙ্খিত সেবা পেয়েছে। এখন কেউ তাকে দিয়ে এমন অভিযোগ করাতে পারে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার দায়ের করা মামলায় মাহিনুর আক্তার মাহি উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে রাফার সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বছরের ৫ অক্টোবর তিনি ঢাকা থেকে যশোরে আসেন। রাফা বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ও ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই তরুণীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যশোরে এসে রাফার বাড়িতে যান। রাফা সবকিছু অস্বীকার করেন, এমনকি নানা হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি মামলা করেন।
এদিকে ঘটনার একদিন পর অর্থাৎ রোববার জেলা ছাত্রদলের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে সাইফুল ইসলাম রাফাকে। গণমাধ্যমে পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।