নভেম্বর মাসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৫৩৩ জন নিহতের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি (২০১ জন) ছিল প্রধান ঝুঁকি, যা মূলত দ্রুতগতি, হেলমেট ব্যবহার না করা এবং অদক্ষ চালকদের দ্বারা পরিচালিত। এই ঝুঁকি ঢাকা বিভাগে (১৫৫টি দুর্ঘটনা) সবচেয়ে বেশি প্রকট। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়াকে কঠোর করা এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় (বিশেষত মোটরসাইকেলের জন্য) ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও স্বয়ংক্রিয় জরিমানা ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা আবশ্যক।
ঢাকা অফিস
গত নভেম্বর মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ সময়ে ৫২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০৭ জন নিহত এবং ৮৯৯ জন আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনা যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক প্রাণহানি আরও বেড়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি-এর মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনটি জানিয়েছে, দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার খবর মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বরে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪০ জন নিহত ও ১ জন আহত হন। নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ জন এবং নিখোঁজ হন ৪ জন। সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৭৭টি দুর্ঘটনায় ৫৩৩ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। বিভাগটিতে ১৫৫টি দুর্ঘটনায় ১৩২ জন নিহত ও ২৫৭ জন আহত হয়েছেন। বিপরীতে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে—১৯টি ঘটনায় নিহত ২১ জন এবং আহত ৮৯ জন।
যানবাহনভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। মাসটিতে ১৯৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০১ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হন।
দুর্ঘটনায় জড়িত মোট ৭৪৬টি যানবাহনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ, বাস ১৩ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক ১৩ শতাংশ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা ৯ দশমিক ১১ শতাংশ এবং কার-জিপ-মাইক্রোবাস ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
নিহত ও আহতদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ। এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ১২ জন, চালক ১১৩ জন, পথচারী ৯৭ জন, পরিবহন শ্রমিক ৪১ জন, শিক্ষার্থী ৪৫ জন, শিক্ষক ১২ জন, নারী ৮০ জন, শিশু ৬০ জন, চিকিৎসক ৫ জন, সাংবাদিক ৫ জন এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী ৬ জন।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংগঠনটি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামত, রাতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরি ও যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস নিশ্চিতকরণ, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিতকরণ এবং মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে।
