শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোরের দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাক-কান-গলা (ইএনটি) চিকিৎসক ডা. শাহীন রেজা সিজারিয়ান অপারেশ করে রোগীদের মৃত্যুমুখে ফেলছেন। মাস দেড়েক আগে ডলি বেগম নামে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনে ভুলে খাদ্য ও প্রসাবের নাড়ি একত্রে সেলাই করে দেন তিনি। বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন। ভুক্তভোগী রোগী যশোরের বাঘারপাড়ার চানপুর গ্রামের মঈনুল ইসলামের স্ত্রী ডলি বেগম। গতকাল রোববার তার স্বজনরা ক্লিনিকে গিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এসময় আশপাশের লোকজনও ওই ক্লিনিকে ছুটে আসেন। ওই চিকিৎসক ইএনটি’র হয়ে কিভাবে সিজার করছেন এমনটা প্রশ্ন করেন সাধারণ মানুষ। এ প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতে পারেন রোববার বিকেলেও ওই ইএনটি চিকিৎসক অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করছেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. শাহীন রেজা যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি এ নিয়ে অর্ধ-শতাধিক সিজার করেছেন বলে স্বীকার করেন।
ভুক্তভোগী রোগী ডলির স্বজন সাকিবুজ্জামান জানান, গত মে মাসের ১৯ তারিখে সিজারের জন্য সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার খালাকে। সেখান থেকে দালালের খপ্পরে পড়ে তারা দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করেন। ভর্তির কিছু সময় পরেই তাকে ওটিতে নিয়ে গিয়ে ইএনটির চিকিৎসক শাহীন রেজা সিজার করেন। সিজারের সময় ওই চিকিৎসক ভুলে খাদ্য ও প্রসাবের নাড়ি একত্রে সেলাই করে দেন। এতে তার জরায়ুর রাস্তা দিয়ে মলমূত্র বের হতে থাকে। একপর্যায়ে তারা যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করেন। সিজারের দেড় মাস পার হলেও রোগীর অবস্থা দিনদিন অবনতি ঘটছে। এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি ও তার পরিবার এই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি করেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক শাহীন রেজা বলেন, একজন এমবিবিএস চিকিৎসক সব কিছু করতে পারেন। তিনি অকপটে জানান, এপর্যন্ত আমি অর্ধ-শতাধিক সিজার করেছি। তার মধ্যে এটা ও এর আগে আরও একটির অভিযোগ এসেছে। তাছাড়া সকলেই সুস্থ আছেন। ভুক্তোভোগী ডলির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার করা সিজারের রোগীকে কেন তারা অন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলো ? রোগীর স্বজনরা আমাকে জানাতে পারতো। তা না করে তারা এ হাসপাতাল, সে হাসপাতাল নিয়ে ঘুরছেন। এতে আমার কি করার থাকে ?
রোববার রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হয়ে পড়লে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের সামনে এসে হট্টগোল শুরু করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ওই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানতে পারেন ওই চিকিৎসক এর আগে আলফাজ হোসেন নামে এক রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স বা অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করছেন।
আলফাজের ভাই আরমান হোসেন জানান, তার ছোট ভাইকে গত চারদিন আগে অ্যাপেন্ডিক্স বা অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোববার তার অপারেশন থাকার কথা থাকলেও করা হয়নি। এসময় তারা এক দালালের মাধ্যমে দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে তারা জনতে পারেন তার ভাইকে একজন ইএনটির চিকিৎসক অপারেশন করছেন।
এবিষয়ে কোতোয়ালি থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে হসপিটালে গিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান জানান, এমন একটি ঘটনা জেনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অবস্থিত দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন ছাড়াই চলছে। বিগত দিনে দেশ ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে ২০১৭ সালে ১ লাখ, ২০১৮ সালে ২লাখ, ২০২০ সালে ৫০ হাজার ও ২০২১-২৩ সালে বেশ কয়েকবার প্রতারণার অভিযোগে ৫ লাখ টাকার বেশি জরিমানা গুণেছে মালিক পক্ষ।