অতি ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য সমাজের এক শ্রেণির মানুষ অনেক নিচে নামতে পারে। যশোর সদর উপজেলার আবদুলপুর ও খুলনার ঘটনা তার প্রমাণ দিয়ে গেল। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যশোরে শতমানুষের সামনে তরুণ-তরুণীকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে এক ইউপি মেম্বার ও তার সহযোগীরা। মেম্বার আনিচুর রহমানসহ ৪-৫ জন অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ নির্যাতন করে। পুলিশ অভিযুক্ত মেম্বরসহ চারজনকে আটক করেছে। আর খুলনার খানজাহান আলী থানার শিরোমনির তেঁতুলতলায় স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে।
জুতা দিয়ে বেধড়ক মারপিটের ফলে ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যের সাঙ্গ-পাঙ্গরা লাথিও মেরেছে। কয়েকজন যুবক তরুণীর হাত ও পা ধরে রাখে আর ইউপি সদস্যের সঙ্গে থাকা ৩-৪ জন বিভিন্ন লাঠি দিয়ে তরুণীর হাতে-পায়ে আঘাত করে।
এ ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীদের কি বক্তব্য আছে তা আমরা জানিনে। নারীর ওপর হামলাকারীরা মতলববাজ। তারা ওই তরণ-তরুণীর ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে নিজেদের দাপট বা ক্ষমতার বহর দেখাতে চেয়েছিল। সে কারণেই এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালিয়েছে। এটা নিসন্দেহে নিন্দনীয়। ঠুনকো প্রভাব দেখাতে যারা এমন কাজ করতে পারে তারা আরো অনেক নিচে নামতে পারে। তাদের মতো মানুষের পক্ষে খুন-খারাবি, ধর্ষণ কোন ব্যাপারই নয়। যে নির্যাতন তরুণীটির ওপর চালানো হয়েছে তাতে সে মারাও যেতে পারতো। সে কথা ওই মেম্বর ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা মোটেই ভাবেনি। বিষয়টাকে তারা পরোয়া করেনি।
আমরা যেন আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০৬ কন্যাশিশু নির্যাতন এবং ১৬৬ জন নারী নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাসহ ২৭২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি। এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় আমাদের সমাজ অসুস্থ হয়ে গেছে। এটা সভ্য সমাজের লক্ষণ নয়। আমাদের সমাজের কোনো একটা জায়গায় রোগ হয়ে গেছে। অসুস্থ হয়ে গেছি আমরা সবাই।
এই যখন অবস্থা তখন বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব অপরাধের বিচার করতে আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। কারণ প্রত্যেক ঘটনায় জড়িতরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।
ওই তরুণ-তরুণী যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে একজন নির্বাচিত ইউপি মেম্বর এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। যারা সমাজের চালিকা শক্তি তারাই যদি এভাবে সমাজটাকে অস্থিতিশীল করার কাজ করে তাহলে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে? আসলে ওই মেম্বর সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচিত হয়েছে কিনা তা ভাববার বিষয়। এসব তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা বাহুবলে ভোট কেটে নিয়ে জনতার রায় নিজের পক্ষে নেয়।