জাতীয় গণগ্রন্থাগার দিবস পালনে নানা কর্মসূচি
সালমান হাসান: পাঠাগার আন্দোলনের শহর যশোরে দেশের প্রথম গণগ্রন্থাগারের গোড়াপত্তন ঘটে। ইতিহাস ভিত্তিক তথ্য উপাপ্ত অন্তত তাই বলে। ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। তাই এই দিনটিতে পালন করা হয় জাতীয় গণগ্রন্থাগার দিবস হিসেবে। কিন্তু তারও বেশ আগে অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের প্রাচীন শহর যশোরে গণগ্রন্থাগারের উন্মেষ ঘটে। ১৮৫১ সালে এই জেলায় যশোর পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হয়।
শতাব্দী প্রাচীন সেই পাঠাগারটি এখন যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি নাম ধারণ করেছে। এছাড়াও ১৯৮১ সালে যশোরে সরকারিভাবে একটি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার নামে পাঠাগারটি পরিচালিত হচ্ছে। শহরের পুরাতন কসবা থেকে সরকারি এই পাঠাগারটির নাজির শংকরপুরের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সেখানে কয়েকশ পাঠকের আনাগোনা হয়।
কালের চাকা ঘুরে আবারো আজ ৫ ফেব্রুয়ারি। দিনটি পালিত হয় জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে। সৃজনশীল মেধা ও মনন গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষসহ নতুন প্রজন্মকে গ্রন্থাগারমুখী করতে আজ দেশব্যাপী পালন হচ্ছে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২২। ‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার’- প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি উদযাপন হচ্ছে। দেশে এর আগে চারবার জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিধান্ত হয় ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে পালন হবে। দিবসটি উদ্যাপন করতে যশোর সরকারি গণগ্রন্থাগার সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সরকারি গণগ্রন্থাগার চত্তরে ফেস্টুন-বেলুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করা হবে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে দিবসটির উদ্বোধন করবেন। এরপর থাকছে কেককাটা ও আলোচনা অনুষ্ঠান। এদিকে, অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের সময়ে প্রতিষ্ঠিত যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতেও থাকছে জাতীয় গণগ্রন্থগার দিবসের কর্মসূচি। এদিন বিকেলে ৫টা ৩০ মিনিটে পাঠাগারের ইস্যু বিভাগে দিবসটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক আবু জাহিদ।
৫ হাজার ৫০ বর্গফুট আয়াতনের যশোর গণগ্রন্থাগার ভবনে রয়েছে দুটি পাঠকক্ষ। এখানে ৪৪ হাজারের উপরে বইয়ের সংগ্রহ আছে। প্রতিবছর ১০০০-১২০০ নতুন বই সংযোজিত হয়। শনি থেকে বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ, রবীন্দ্র, নজরুল, শিশু, পত্রিকা ও প্রবীণ কর্নার আছে। সহকারী লাইব্রেরিয়ান মমতাজ খাতুন জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কেককাটা ও আলোচনা অনুষ্ঠান। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ হবে এদিন।
যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির তিনতলা বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে ২টি রেফারেন্স কক্ষ। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পাঠকক্ষে বসে যে কেউ পড়াশোনা করতে পারেন। এছাড়া তৃতীয় তলায় গবেষকদের জন্য রয়েছে অধ্যাপক শরীফ হোসেন পাঠকক্ষ। এই ভবনের নিচের তলায় রয়েছে পত্রিকা পাঠকক্ষ। স্থানীয়সহ ঢাকা থেকে প্রকাশিত বেশির ভাগ পত্রিকা এখানে রাখা হয়। এছাড়াও লাইব্রেরির ইস্যু বিভাগ থেকে সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে পড়তে পারেন।