ঢাকার গুলশান থানায় মামলার পর লাপাত্তা তারা
আবদুল কাদের
যশোর শহরের আরএন রোডস্থ (এসএ পরিবহন কুরিয়ারের পাশে) মনপুরা বুটিক নামে একটি কাপড়ের শোরুম উদ্বোধন করা হয় প্রায় ২ বছর আগে। দোকানটিতে রয়েছে কোটি কোটি টাকার পোশাক। দোকানটির মালিক দিপু ও তার স্ত্রী রোজি। তারা চলাফেরা করেন আলিশানভাবে। তাদের এতো দ্রুত উথান দেখে হতবাক বনে গেছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা। মূলত পোশাকের ব্যবসার আড়াতে এই দম্পতি করেন মাদকের ব্যবসা। গত ৫ অক্টোবর ঢাকার গুলশানের পার্কভিউ নামে একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে বিপুল মাদক উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর। এরপর তারা জানতে পারেন হোটেলের মালিক যশোরের দিপু ও গোপালগঞ্জের তানভির। এব্যাপারে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। এরপর যশোর থেকে লাপাত্তা হয়েছেন দিপু ও তার স্ত্রী।
তিন তলা ভবনের দশটি কক্ষ নিয়ে গড়ে উঠেছে পার্ক ভিউ হোটেল। গুলশান দুই নম্বরে অবস্থিত এই হোটেলটি অতিথিদের জন্য বিদেশি মদ, শিশা থেকে শুরু করে নানা ধরণের মাদক সরবরাহ করে। অতিথিদের মনরঞ্জনে সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় নাচ গান। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সবমিলে যেন সন্ধ্যা হলেই হোটেলটি হয়ে ওঠে জলসাঘর। এখানে সব কিছুই হয় মোটা অংকের নগদ লেনদেনের মাধ্যমে। ফলে এসব অর্থের উৎস এবং গন্তব্য আজানা থেকে যায়। এমন জলসাঘর শুধু গুলশানেই নয়, রয়েছে বনানীতেও। অভিজাত পাড়ায় এ ধরণের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিচয়ও।
গুলশান-২ নম্বর চত্বর থেকে কিছুদূর সামনে এগোলেই বাম দিকে ১৫ নম্বর রোড। এই রোডেই ৬৮/এ নম্বর বাড়িটি গত দুই বছর যাবত হোটেল পার্ক ভিউ নামে আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে হোটেলটি ঘিরে নিয়ে অভিযান চালায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসময় হোটেলের ভিতরে তল্লাশি করে অ্যাবসুলেট ভদকা, তাকিলা ভদকা রোমেরিও, ক্লেমোর হুইসকিসহ বেশ কিছু বিয়ার উদ্ধার করা হয়। পাশাপশি হোটেলটি থেকে তিন কেজি শিশা, হুক্কাসহ মাদক ও মাদক সেবনের নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় হোটেলের ম্যানেজার সবুজ শেখকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিএনসির উপ-পরিদর্শক মো. নাজমুল হুদা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পার্ক ভিউ হোটেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় সেখান থেকে বিভিন্ন ধরণের মাদক উদ্ধার করা হয়। হোটেলের ম্যানেজার স্বীকার করেন পার্ক ভিউ হোটেলে দিপু ও তানভীরের নির্দেশনা মোতাবেক অতিথিদের এসব মাদক সরবরাহ করা হতো। এ ঘটনায় গুলশান থানায় আমরা একটি মামলা করেছি।
অভিযানের পরদিন পার্ক ভিউ হোটেলে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে হোটেল কর্তৃপক্ষও দিপু ও তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা পরামর্শ দেন। পরে তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। গত দুই বছর যাবত তিনি যশোরের মনপুড়া বুটিকসের সত্ত্বাধিকারী দিপুর সঙ্গে মিলে হোটেল ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, হোটেলে বিভিন্ন সময় অতিথিরা আসেন। তাদের মধ্যে কেউ মদ নিয়ে আসেন, আবার কয়েক জন আসেন যারা শিশা সেবন করেন। এগুলো সব তারা নিজেরাই আনেন। গুলশান বনানীতে এধরণের অনেক হোটেল থাকার পরেও আমাদের হোটেলে অভিযান হয়েছে। এটা মূলত শত্রুতা করে কেউ করিয়েছে।
তানভীরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের আরএন রোডে বছর ২ আগে মনপুড়া বুটিকসের একটি আউটলেট উদ্বোধন করেন দিপু। এই আউটলেটটির উদ্বোধন করেন যশোর-৩ আসোনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এছাড়াও মনপুড়া বুটিকসের ঢাকা নিউ মার্কেটেও একটি দোকান রয়েছে। সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে শুরুতেই দিপু নিজেকে যশোরের স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের কাজিন (খালাতো ভাই) বলে পরিচয় দেন। পাশাপাশি প্রভাবশালী এক পুলিশ কর্মকর্তাকেও কাছের বড় ভাই হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আসলে পার্ক ভিউ হোটেলটি দুই বছর আগে নেয়া হয়েছে। আমরা এবং আমাদের বন্ধু বান্ধব ও স্বজনরা ঢাকায় গিয়ে যাতে থাকতে সমস্যা না হয়, সেজন্যই মূলত এই হোটেলটি নেয়া। এরবাহিরেও এখানে নানা ধরণের অতিথিরা আসেন। তারা নিজেদের মতো করে সময় কাটান।
সরেজমিন মনপুরা পোশাকের শোরুমে গেলে দিপু ও তার স্ত্রী রোজি কোথায় রয়েছেন তা জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। শোরুমটির ম্যানেজার ইয়াসিন খান বলেন, আমি এখানে চাকরি করি। তারা কোথায় রয়েছেন তা বলতে পারবনা। ফোন নাম্বার দেয়া নিষেধ রয়েছে।
একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পোশাকের ব্যবসার আড়ালে অনেক আগে থেকেই মাদকের ব্যবসা করে আসছেন দিপু ও রোজি দম্পত্তি। পোশাকের সাথে তারা মাদক ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। একই সাথে যশোরের চৌরাস্তায় রয়েছে গ্লোবাল ভিশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। তারা বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ।
শহরের বেজপাড়ার মুরাদ নামে এক যুবক গ্লোবাল ভিশনের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর বলে ১০ লাখ টাকা নেন দিপু। পরে আর তাকে বিদেশে পাঠায়নি। এধরণের অভিযোগ আরও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে যশোরের ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দিপুর বিরুদ্ধে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।