 আব্দুল্লাহ সোহান, মনিরামপুর
আব্দুল্লাহ সোহান, মনিরামপুর
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, জাগপা. এবি পার্টির একক প্রার্থী নিশ্চিতে মাঠে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিতে প্রার্থিতার লড়াই এখন তুঙ্গে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কখনো রাজধানী, কখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটছেন। হাইকমান্ডের নজরে আসতে চলাচ্ছেন প্রাণপণ চেষ্টা। নেতাকর্মীদের মন জয় করতে দিচ্ছে প্রতিশ্রুতি। তবে চায়ের দোকান থেকে দলীয় কার্যালয় সবখানেই একই কথা- কে হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী ?
এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থিতার লড়াইয়ে রয়েছেন এ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, ইফতেখার সেলিম অগ্নি, আসাদুজ্জামান মিন্টু, এ্যাড. এমএ গফুর, জাহানারা সিদ্দিকী, মুনির আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, এবিএম গোলাম মোস্তফা তাজ ও প্রয়াত মো. মুসার পুত্র কামরুজ্জামান শাহিন। ইতিমধ্যে ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন’র কার্যালয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা মতবিনিময় সভায় এই ৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী অংশ নেন। অবশ্য প্রথম দিকে এ সংখ্যা ছিল ৩-৪ জন। তখন মূল আলোচনায় ছিলেন মো. মুসা, এ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন ও ইফতেখার সেলিম অগ্নি। মুসা সম্প্রতি মারা গেছেন। এরপর দিন যত যাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা ততই লম্বা হচ্ছে।
এদিকে, একক প্রার্থী হিসাবে প্রচার চালাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এ্যাড. গাজী এনামুল হক। দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করায় তিনি নির্বাচনী মাঠের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটছেন। চলছে নিয়মিত সভা-সমাবেশও। এছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী জয়নাল আবেদীন টিপু চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
জানা যায়, ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নির্বাচনী আসন ৮৯, যশোর-৫ (মনিরামপুর)। উপজেলা নির্বাচন অফিসার কামরুজ্জামান জানান, এ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন। নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৪০ জন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ আসনটিতে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ১৯৭৯ বিএনপির প্রার্থী আফসার আহমদ সিদ্দিকী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ২০০১ সালে বিজয় হন ঐক্যজোটের (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম) প্রার্থী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, ২০০৮ সালে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী পন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী। সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে লড়েছেন নৌকা বঞ্চিতরা। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ভোট হবে ধানের শীষের সাথে জামায়াতের। তাই ধানের শীষের প্রার্থী কে হবে সেটাই রয়েছে মূল আলোচনায়। কর্মীদের ভাষ্য, মতানৈক্য, দ্বন্দ্ব-অপছন্দ থাকলেও ধানের শীষের প্রশ্নে তারা এক ও অভিন্ন, তাদের কথা ‘যিনি পাবেন ধান, তিনি হবেন প্রাণ।’
সূত্র মতে, ধানের শীষ পেতে জোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। বিগত সময়ে দু’বার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বিগত সময়ে তিনি মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শহীদ ইকবাল হোসেন বলেন, আমি ইতিপূর্বে নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে ছিলাম, এবারের নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। শত প্রতিকূল পরিবেশেও সব সময় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো। এ লক্ষ্যে এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগও বাড়িয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসাবেই পরিচিত মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু । তিনি জানান, হাইকমান্ড বলেছে কাজ করতে, আমি কাজ করছি, ধানের শীষের জন্য কাজ করছি। মনোনয়নের ক্ষেত্রেও আমি আশাবাদী। তবে ধানের শীষ যিনিই পাবেন, তাকেই বিজয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।
মিন্টু আরও বলেন, দলের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। করোনা মহামারির সময় মনিরামপুর পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নের মানুষের পাশে ছিলাম। করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশে থেকে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে সেবা দিয়ে এসেছি। তারুণ্যের যে জাগরণ সারা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, তার ধারাবাহিকতায় দল তরুণদের মূল্যায়ন করবে বলে আশা করি।
আরেক শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি। তিনি করোনাকালে মনিরামপুরবাসীর পাশে ছিলেন। যথাসম্ভব খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবনে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। সেই থেকে রাজনীতি মানে আমার কাছে জনসেবা। ২০১৪ সালে ঢাকা থেকে গুম হয়ে বহু চেষ্টায় প্রাণে বেঁচে ফিরি। সংগঠনের কর্মসূচি পালন শেষে খুলনা থেকে ফেরার সময় ফ্যাসিস্টদের হামলার শিকার হন তিনি।
ইফতেখার সেলিম অগ্নি বলেন, দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। কোন চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজি, লুটপাট, দখলের কোনো অপবাদ আমার নাই। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। এছাড়া সাংগঠনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দেশের বড় কৃষি উদ্যোগসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রাধান্য দিলে অবশ্যই আমি মনোনয়ন পাবো। আমি প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে সমাজে সর্বস্তরে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সর্বচ্চ গুরুত্ব দিব।
যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামের কর্ম পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী গাজী এনামুল হক। তিনি দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাংগঠনিক কার্য্যক্রম ছাড়াও প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে সভা-সেমিনার ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন লবিং গ্রুপিং না থাকায় দলের একক প্রার্থী হিসেবে উৎসবমুখর পরিবেশে সংগঠনের নেতাকর্মী নির্বাচনী কার্যক্রম করে যাচ্ছেন।
মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার পিতা মুফতি ওয়াক্কাস ২০০১ সাল ও ২০০৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বের জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার তিনি বিএনপির নেতৃত্বের জোটের প্রার্থী হবেন বলে আশাবাদী। গত ৫ জুলাই মনিরামপুর জেলা পরিষদ অডিটরিয়মে সংগঠনের এক সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম তাকে বিএনপি জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে গেছেন। আর এ ঘোষণার পরেই সাধারণ জনগণের মধ্যে তিনিও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছেন।
মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস বলেন, ইতিমধ্যেও নির্বাচনী গণসংযোগ করাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভালবাসায় এগিয়ে যাবো।
যশোর-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের মনিরামপুর উপজেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন টিপু মাস্টারকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
জয়নাল আবেদীন টিপু বলেন, নেতা নয়; খাদেম হিসেবে কাজ করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে, সন্ত্রাস-চাদাবাজ, দখলমুক্ত নিরাপদ জনপদ গড়ে তুলবো। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচনী গণসংযোগ আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি এ আসনে আমরা বিজয়ী হবো।
এদিকে, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের মনিরামপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা তবিবর রহমান। তিনিও কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)’র একক প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যশোর জেলা কমিটির সভাপতি এবং খুলনা বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক নিজামদ্দিন অমিত। তিনি এই আসন থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে আমার সব সময় যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে চলেছি।
অন্যদিকে, এবি পার্টি যশোর-৫ মনিরামপুর আসনে মনোনায়ন পেয়েছেন মো. হাবিবুর রহমান। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছের সাবেক মেজর মোস্তফা বনি। তারাও সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।
	সর্বশেষ
	
				- নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসন নতুন করে সাজানো হবে; নভেম্বরে শুরু নতুন ডিসিদের নিয়োগ
- দাবি না মানলে কাল থেকে পোলট্রি খাত বন্ধের হুঁশিয়ারি
- সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের অনুমতি মিললেও নেই পর্যটকের সাড়া
- অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা : বেনাপোল বন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
- বিপুল, হাজী সুমন, শাহারুল,বিপু,হিটার নয়নসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- যশোরের আওয়ামী লীগ নেতা শাহারুল ঢাকায় আটক
- বিএনপির আমলে বেকারদের বিনা পয়সায় চাকরি দিয়েছি
- লালনের গানে গানে শিল্পী ফরিদা পারভীনকে স্মরণ

 
									 
					