জমি বেহাত হওয়ায় স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু
আর একজন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমিদস্যু ইদ্রিসের অত্যাচারে স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে লতিফার স্বামী কামরুল ইসলামের। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন গৃহিনী হালিমার স্বামী আনিচুর। তিনিও স্ট্রোকে আক্রান্ত। সব্বত আলীর স্ত্রী ফেরদৌসি খাতুন, ছবেদ আলীর স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ও শরিফুল ইসলামের মা হারা মেয়ে শরিফা খাতুনের জমিও বেহাত হয়েছে। প্রতিবেশি তরিকুলের দোকান ও ইমদাদুলের বসত বাড়ির দখলে নিতে শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। বেদখল জমি ফিরে পাওয়াসহ হুমকি-ধামকি থেকে পরিত্রাণে ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন মহলে হেঁটে হাঁপিয়ে উঠেছেন। প্রভাবশালী এই ভূমিদস্যু এক পুলিশ কর্মকর্তার জমি দখলে নেয়ার চেষ্টাও করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলার।
কায়েমকোলা বাজারে জমি দখলের মহড়া শুরু হয় বছর কয়েক আগে। ঘোড়াদহ গ্রামের ইদ্রিস আলী অদৃশ্য খুঁটির জোরে জমি দখল ও ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদের মহড়া শুরু করেন। একের পর এক বেশ কয়েকটি পরিবারের জমি দখলে নিয়েছেন। পৈত্রিক সূত্রে তিনি মাত্র সাড়ে ৩ শতক জমির মালিক। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা দলিল ও ভুয়া কাগজপত্রে তিনি বেশ কয়েকটি পরিবারের জমি দখলে নিয়ে সাড়ে ৪৩ শতক জমির মালিক বনে গেছেন। এখন নজর পড়েছে প্রতিবেশি তরিকুল ইসলামের দোকান ও ইমদাদুল ইসলামের বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে। তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের মামলাও ঠুকেছেন ইদ্রিস।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ইদ্রিস খুবই প্রভাবশালী। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় কেউ-ই টু-শব্দ করার সাহস করেন না। মহিদুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার জমি দখলে নেয়ার চেষ্টাও করেছেন ইদ্রিস। ভিটে বাড়ি হারিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরেকজন স্ট্রোক করে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
লতিফা নামের এক নারী জানান, তার ৫ শতক জমি দখল করে নিয়েছেন ভূমিদস্যু ইদ্রিস। জমি উদ্ধারে বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়ে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তার স্বামী কামরুল ইসলাম স্ট্রোকে মারা গেছেন। ভিটে-বাড়ি ও স্বামী হারিয়ে তিনি পথে বসেছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে এই বিধবার। তিনি অভিযোগ করেন, ইদ্রিস এসপি’র ভয় দেখায়। পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে সম্ভ্রমহানীর ভয় দেখায়।
সন্তোষনগরের গৃহিনী হালিমা খাতুন অভিযোগ করেছেন, ইদ্রিস তার সাড়ে ৬ শতক জমির মধ্যে আড়াই শতক দখল করে নিয়েছেন। বিভিন্ন মহলে ছুটে প্রতিকার মেলেনি। জমি হারিয়ে স্বামী আনিচুর রহমান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। চলতি সপ্তাহে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন এখন চিকিৎসার খরচ কোথায় পাবো-সেই চিন্তায় মাথা ঘুরছে।
শার্শার কাশিপুর গ্রামের ছবেদ আলীর স্ত্রী ফিরোজা খাতুন অভিযোগে বলেন, কায়েমকোলা বাজারে পৈত্রিক জমি দখল করে নিয়েছে ইদ্রিস। গত ৬ বছরেও জমি উদ্ধার করতে পারেননি। চেয়ারম্যান-মেম্বার ও থানায় ছুটে লাভ হয়নি।
শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার স্ত্রীর মৃত্যুতে মেয়ে শরিফা নানা বাড়ির সম্পত্তির ওয়ারেশ হয়। কিন্তু মা-হারা মেয়েটির সমুদয় সম্পত্তি জালিয়াতি কাগজপত্র দেখিয়ে ইদ্রিস নিজের নামে করিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়েছে কিন্তু ইদ্রিসের কবল থেকে জমি উদ্ধার হয়নি।
ওয়েল্ডিং দোকানের মালিক তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার দোকান দখলের পায়তারা শুরু করেছে ইদ্রিস। প্রায়ই এসে বলে এই দোকানের মধ্যে তার জমি রয়েছে।
ইদ্রিসের প্রতিবেশি ইমদাদুল হক বলেন, তার ভিটে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমির সাথে ইদ্রিসের জায়গা-জমির কোনো সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদের মামলা ঠুকেছে ইদ্রিস। অকারণে হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কায়েমকোলা বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ইদ্রিস ভূমিদস্যু। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান না। তার দখলবাজির শিকার হয়ে পথে বসেছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। জমি বেহাত হওয়ায় একজন স্ট্রোকে মারা গেছেন বলেও তারা শুনেছেন।
এ বিষয়ে ইদ্রিস বলেন, আমি কারো কোন জমি নেইনি। আমার দলিল-দস্তাবেজ সব সঠিক আছে।