কার স্বার্থে এবং কেন মাটি বেচাবিক্রি তা জানতে চান সচেতন মহল
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ব্রিজ। ব্যস্ততম সড়কের মধ্যেও অন্যতম। যানজট এখানে নিত্যদিনের চিত্র। মুমূর্ষু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের চাকাও থেমে যায় এখানে এসে। দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ কমাতে পৌর মেয়র উদ্যোগ নিয়েছেন তীরঘেঁষে বাইপাস সড়ক নির্মাণের। ইতিমধ্যে টেন্ডার কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। এ খবরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে সর্বমহলে। কিন্তু হুট করে ভৈরবপাড়ের মাটি বেচাবিক্রির ঘটনা সেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ছন্দপতন ঘটিয়েছে। দিন – রাতে ট্রাক ট্রাক মাটি চলে যাচ্ছে অজানা স্থানে। কিন্তু কেউ-ই বলতে পারছেন না নদীরপাড় কেটে মাটি বেচাবিক্রির সাথে কে বা কারা জড়িত।
দড়াটানা ব্রিজের উত্তর-পশ্চিমে নদীপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ডাব বিক্রি করে আসছিলেন একদল ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডাব বিক্রেতা জানান, সপ্তাহখানেক আগে আমাদের সরে যেতে বলা হয়। পরদিন দেখি নদীর পাড় কেটে দুটো ট্রাকে করে মাটি যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জানার চেষ্টা করেছি মাটি যাচ্ছে কোথায় কিন্তু স্বীকার করেনি কেউ। শহরে দিনের বেলায় ট্রাকসহ ভারি যানবাহন প্রবেশ নিষেধ। দীর্ঘদিন এই নিয়ম চলে আসছে। কিন্তু ভৈরবের মাটি পাচারে ব্যবহৃত দুটো ট্রাকের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এতে ধারণা করা যায় প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে জানে। কোনো প্রভাবশালী জড়িত থাকায় পুলিশ বাধা দিচ্ছে না ট্রাক দুটির প্রবেশে।
অসমর্থিত একাধিক সূত্রের দাবি, দিনভর ভৈরব নদের মাটি যাচ্ছে পুলিশ লাইনে। তবে রাতে মাটি পাচার করা হচ্ছে অন্য কোথাও। এভাবে নদের মাটি বিক্রি বা পাচার করা প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বলে দাবি জানিয়েছেন দু’জন আইনজীবী।
এর আগে পৌর মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ জানিয়েছিলেন, ভৈরব নদের তীর ঘেঁষে পূর্ব-পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার বাইবাস সড়ক নির্মাণের টেন্ডার হয়ে গেছে। বাবু পাটোয়ারী কাজ পেয়েছেন। দ্রুতই সড়ক নির্মাণ শুরু হবে। তিনি নদীপাড়ের অবৈধ স্থাপনা ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশও দেন কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি।
গত সপ্তাহে ডাব বিক্রেতাদের সরিয়ে নদের পাড়ে ট্রাক ঢোকার পথ তৈরি করা হয়। ডাব বিক্রেতাদের কে বা কারা সরে যেতে বলেছে তা স্বীকার করেননি ভুক্তভোগীরা।
তারা জানান, দিন-রাত ২৪ ঘন্টায় দুটো ট্রাকে মাটি যাচ্ছে। একটি সূত্র জানায়, প্রতি ট্রাক মাটি ৯০০ টাকা করে কিনে পাচারকারী চক্র ১৩০০ করে বিক্রি করছে। নদের মাটি ব্যস্ততম দড়াটানা সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পিছিল হয়ে সড়কটিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
মাটি বিক্রি বা পাচারের মোটিভ কী জানা না গেলেও অনেকেই অভিযোগ করেছেন ভৈরবপাড়ের অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় নানা ফন্দি-ফিকির করা হচ্ছে। এ কাজে মোটা অংকের টাকার হাত বদল হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
ট্রাক দুটির সামনে-পেছনে দুটো মোবাইল ফোন লেখা আছে। একটি আকতার হোসেন (০১৭০৯-৫৩৮২৭৯) এবং অপরটি (০১৭১৯-৭৩০২০০) জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজনের।
প্রথমজনের নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় নম্বরে ফোন করা হলে আকতার হোসেন জানান, আমি ট্রাক্টর তৈরি করি, কিন্তু ট্রাকের মালিক আমি না। কথোপকথনের এক পর্যায়ে মাটি কেনার প্রস্তাব দিলে তিনি ট্রাক মালিক তুষার বলে জানান। তিনি ফোনটি অপর এক ব্যক্তির কাছে দেন। সেই ব্যক্তি নিজেকে তুষার দাবি করে বলেন, ট্রাকের মালিক আমি কিন্তু ভৈরবের মাটি বেচাবিক্রির বিষয়ে কিছুই জানা নেই। একপর্যায়ে সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে-নদের মাটি বেচাবিক্রির বৈধতা নিয়ে। তারা বলছেন-দ্রুতই যেখানে বাইবাস সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে, সেখান থেকে শ’ শ’ ট্রাক মাটি বিক্রি করার ঘটনা রহস্যজনক। নদের পাড় কেটে মাটি পাচারের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়েছে।