নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে মানবিকতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান। তিনি যশোরে একটি বেসরকারি ব্যংকে চাকরি করেন। জানা যায়, গত ১২ মে ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। বর্তমানে বৃদ্ধার সার্বিক অবস্থা জানতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গেলে দেখা যায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি তিনি আছেন। মানিসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় মেঝেতে রাখা হয়েছে তাকে। কর্তব্যরত নার্স ও অন্যান্য রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা হাঁটা চলা করতে পারেন না। প্রসাব পায়খানা বিছানাতেই করেন যার কারণে বেডে রাখা সম্ভব হয়নি।
গত তিন দিন আগে ভর্তি হওয়া এক রোগীর স্বজন বলেন, আমরা হাসপাতালে এসে ধরেই দেখছি এই বৃদ্ধা এখানে আছেন। তার কোন আত্মীয় স্বজনকে কখনো আসতে দেখিনি। ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মী তার প্রসাব পায়খানা পরিস্কার করে দেয়। নার্সরাও আন্তরিকতার সাথে তার সেবা করছেন। রাউন্ডে ডাক্তার আসলে তার সাথে কথা বলে নার্সদের নির্দেশনা দিয়ে যায়। সেইভাবেই তার চিকিৎসা চলছে।
দায়িত্বরত নার্স আকলিমা খাতুন বলেন, গত ১২ মে নাজমুল হাসান নামে একজন অজ্ঞাত এই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে যান। তখন তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। পরে ডাক্তার মধূসুধন পাল তাকে দেখেন এবং ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে যে ওষুধ সাপ্লাই আছে নিয়মিত সেগুলো তাকে খাওয়ানো হয়। সেলাইন দেয়া হয়। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. মধুসূধন পাল বলেন, আমাদের কাছে সব রোগী সমান। কিন্তু এই রোগীর সাথে কোন স্বজন না থাকায় উন্নতমানের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সাধ্যের ভেতর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য।
ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ব্যক্তিগত কাজে আমি ও বন্ধুরা গত ১২ মে শহরের চারখাম্বা মোড়ে যায়। সেখানেই এই বৃদ্ধাকে দেখতে পায় জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তখন বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি তাকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং ভর্তি করি। পরে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ও খাবার কিনে দিয়ে আসি। এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয় আমাদেরকে জানানোর জন্য। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এখন তিনি অনেকটা সুস্থ আছেন। হাসপাতাল থেকেই তার খাবার দেয়া হচ্ছে। আয়া এবং নার্সরা তার সমস্ত দেখভাল করছেন। বিষয়টি জেনে খুবই ভালো লাগছে। আমি তো শুধু তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু তাকে সুস্থ করেছেন তারাই। এভাবেই যদি আমরা সবাই মানবিক হয় তাহলে নিশ্চয় একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।