সুনীল ঘোষ: যশোরে মোবাইল ফোনের পুরনো ব্যাটারি কেজি দরে কিনে পিস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ আবার চড়াদামে বিক্রি করে ওই মোবাইল ফোনের পার্টস। জোড়াতালির মোবাইল সেট বেচাবিক্রিও হয় এসব দোকানে। কম পূঁজির নয়ছয় এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যশোর জেলা জুড়ে। বৈধ-অবৈধ তারা বোঝে না। এতে অনেকের রাতারাতি বদলে গেছে আর্থিক অবস্থা। কেউ কেউ পুরনো মোবাইল ফোনের পার্টস ক্রয় করে উপকৃত হলেও অধিকাংশ হচ্ছেন প্রতারিত। অভিযোগ রয়েছে, পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা মেকানিকদের কাছে আসলে প্রতিকারের বদলে নাস্তানাবুদের শিকার হতে হয় ক্ষতিগ্রস্তদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর শহরের মাইকপট্টি ও ইডেন মার্কেটে এ ধরণের প্রায় দু’ডজন প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলেছে। এর বাইরে শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ‘মোবাইল সার্ভিসিং’ নামে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে অনেকেই এ ঠকানোর ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিনব কৌশলে এসব অসাধুরা দিনে-দুপুরে ক্রেতা ঠকাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার ইডেন মার্কেটের সামনে কথা হয় রাজগঞ্জের স্কুলছাত্র সাইফুর রহমানের সাথে। সে বলে, মাসখানেক আগে কম দামের একটি মোবাইল ফোন কিনতে এসেছিলাম শহরে। ইডেন মার্কেটের সামনে পৌঁছালে একজন হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ইডেন মার্কেটে একটি সার্ভিসিংয়ের দোকানে। আড়াই হাজার টাকায় একটি সেকেন্ড হ্যান্ড সেট পেয়ে যাই। দোকানদার বলেছিল ১০ বছরেও সমস্যা হবে না। কিন্তু ২৬ দিনের মাথায় সেটটি অটো বন্ধ হয়ে গেছে। রাত পোহালে ছুটে আসি সেই দোকানে। কিন্তু দোকানি বলছেন- এ সেট তার দোকানের না। নিরূপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
একইদিন বিকেলে মাইকপট্টিতে কথা হয় তেরখাদার কৃষক নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সেটে ব্যাটারির সমস্যা। চার্জ থাকে না। মার্চের ১৫ তারিখে ইডেন মার্কেট ঘেটে অর্জিনাল ব্যাটারি পাইনি। শেষ পর্যন্ত মাইকপট্টির আরজি ইলেক্ট্রিক, সামি ইলেক্ট্রনিক্স ও ইব্রাহীম ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স দোকান ঘেটে আড়াইশ টাকায় ব্যাটারি কিনেছিলাম। কিন্তু মাসখানেকও গেল না। আজ এসে বললাম, কিন্তু দোকানদার সাফ জানিয়ে দিলো এসব ফেরত নেয়া বা পরিবর্তন করে দেয়ার নিয়ম নেই।
তিনি বলেন, প্রতারিত হয়ে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যাচ্ছি। সেখানে অর্জিনাল ব্যাটারি পাওয়া যেতে পারে ।
শনিবার ঝিনাইদহের ব্যাপারীপাড়ার ট্রাক চালক হাবিবুর রহমান বলেন, ইডেন মার্কেটে মোবাইল সার্ভিসিং করে ঠকেছি। ৪০০ টাকা নিয়েছিল পুরনো সেটের আইসির দাম। বলেছিল ৫ বছরেও কিছু হবে না।
তিনি বলেন, ১৩ দিনের মাথায় সেট অকেজো হয়ে যায়। এখন দোকানি বলছে সেট সচল করে দিয়েছিলাম, সমস্যা হতেই পারে। ফের সচল করতে ৪০০ টাকা লাগবে।
রূহিন নামে এক যুবক বলেন, ইডেন মার্কেটে দিনে-দুপুরে ডাকাতি হয়। পুরনো সেট ভাংড়ির দামে কিনে পার্টস খুলে বিক্রি করে কয়েক হাজার টাকা।
কিন্তু কিছুই করার নেই দাবি করে এই যুবক বলেন, এসব দোকানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ওঠাবসা করেন। স্থানীয় প্রভাবশালীরাও অনৈতিক সুবিধা নেয়। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ ধোপে টেকে না। উল্টো নাস্তানাবুদ হন অনেকে।
মাইকপট্টির খাইরুননেসা মার্কেটের নিচতলায় দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে ট্রে ও র্যাকে থরে থরে সাজানো রয়েছে মোবাইল ফোনের পুরনো ব্যাটারি। কেজি দরে কিনে এ সব ব্যাটারি বিক্রি করা হয় পিস হিসেবে। মার্কেটের ইব্রাহীম ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের ফারহান হোসেন ও আবু হুরাইয়া জানান, তারা কর্মচারী। মালিকের বাড়ি বিরামপুরে। তিনি এখন দোকানে নেই।
আর এক দোকানি দীপক রায় পুরনো ব্যাটারি কেনাবেচার বৈধতার বিষয়ে তারা বলেন, এসব বিষয়ে কিছু জানা নেই।
এত ব্যাটারির উৎস কী জানতে চাইলে একই মার্কেটের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, ভাংড়ি ব্যবসায়ীরা যোগান দেয়। কেজি দরে কিনে পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। এ ব্যবসায় প্রায় পুরোটাই লাভ। তার ভাষ্যমতে, কেজি দরে কেনা ব্যাটারির প্রতি পিসের দাম ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা পড়ে। কিন্তু দোকানে সর্বনিন্ম ৮০ এবং সর্বোচ্চ আড়াইশ টাকায় কিনতে হয় ক্রেতার। বেশি দরে পুরনো ব্যাটারি মানুষ কেন কেনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেক মোবাইল সেটের নতুন ব্যাটারি পাওয়া যায় না। মানুষ নিরূপায় হয়ে পুরনো ব্যাটারি বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন।