শীতের শেষে আশির্বাদের বৃষ্টি নাগরিক জীবনে ছন্দপতন
পুষ্ট হবে বোরোর বীজতলা
বৃষ্টিতে কমলো সেচ খরচ
সুনীল ঘোষ: শীতের শেষভাগে এসে বৃষ্টিতে ভিজছে যশোরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মাঘের এই বৃষ্টি প্রকৃতির আর্শিবাদ-বলছেন চাষিদের কেউ কেউ। প্রবাদেও বলা আছে-‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূণ্য দেশ’। খনার এই বচন যেন সত্যিই, অন্তত কৃষকদের ভাষ্য সেরকমই। একই মত কৃষি দপ্তরেরও। মাঠের বোরো ফসলসহ মৌসুমি ফলের জন্য আশির্বাদ হবে মৌসুমের এই বৃষ্টিপাত। তবে পানি জমলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আলু ও পেঁয়াজের চাষাবাদ। ফসল দুটির ক্ষেতে যাতে পানি না জমে তার জন্য চাষিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপ জনিত এই বৃষ্টিতে নাগরিক জীবনে ঘটেছে ছন্দপতন। খানিকটা দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন। শহরের রাস্তায় পানি জমায় চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে লাভবান হয়েছে কৃষক। তারা বলছেন, বোরোর আবাদ মূলত সেচ নির্ভর। ফলে এই বৃষ্টি কমিয়ে দিয়েছে তাদের কয়েক দিনের সেচ খরচ। এছাড়া বোরোর চারাতলার জন্যও উপকার বয়ে এনেছে এই বৃষ্টিপাত। সদরের চাঁচড়ার ভাতুড়িয়ার কৃষক আতাউর রহমান বলেন, এই বৃষ্টি হওয়ায় ‘পাতো’র (স্থানীয় ভাষায় ধান চারার নাম) জন্য ভালো হয়েছে।
যশোরস্থ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, শুক্রবার সারাদিনে যশোরে ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বেলা ১১টার দিকে যশোরে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া শুরু হয়। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। আগামী দুই থেকে তিনদিন অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। সূত্র মতে, এ সময় যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৪৫ মিলিমিটার গড় বৃষ্টি রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণও হতে পারে।
আম ও লিচু চাষিরা বলছেন, শীতের এই বৃষ্টি ফল দুটির জন্য ভালো হবে। বৃষ্টির পানি পেয়ে ‘বোল’ (ফলের ফুল) হৃষ্টপুষ্ট হবে। ঝরে পড়াও কমবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মনে করেন -এই বৃষ্টি আশীর্বাদের। তার মতে, সব ফসলের ফলন এতে বাড়বে। লাভবান হবেন কৃষক।
তিনি জানান, মাঘের শেষ সপ্তাহের এই বৃষ্টি প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক। এই বৃষ্টি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। সেচ নির্ভর স্বপ্নের বোরো ফসলের জন্য খুবই উপকার হবে। কৃষকের সেচ খরচ কমবে। বীজতলার চারা রুষ্ট-পুষ্ট হবে। মাটিও নরম হবে। ফলে চারা উত্তোলনে শ্রমিক খরচ বাঁচবে।
যশোর সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রী সুস্মিতা রায় জানান, শুক্রবার হঠাৎ-ই দমকা ঝোড়ো হওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়। দ্রুত জানালা বন্ধ করি কিন্তু তার মধ্যেই খাট-পালঙ্কের লেপ-তোষক ভিজে জবজবে হয়ে গেছে।
মুদি দোকানি লালু প্রসাদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই যশোরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। মেঘের ঘনঘটা দেখে বুঝতে পারছিলাম বৃষ্টি হতে পারে। সকালে আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকলেও দোকান খুলেছিলাম। তবে বেচা বিক্রি তেমন হয়নি। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি।
টিবি ক্লিনিক পাড়ার ইজিবাইক চালক সাঈদ জানান, পরের বাইক ভাড়ায় চালাই কিন্তু আজ বৃষ্টির কারণে ভাড়া ভালো হয়নি। মালিকের বাইক ভাড়ার ৫শ’ টাকাও তুলতে পারিনি। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকলে সংসার চালানো কঠিন হবে। তার চেহারায় হতাশার ছাপ দেখা যায়।শেখহাটির কৃষক আব্দুল করিম জানান, বোরো চাষ চলছে। সকালে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের কাজে আসার কথা ছিল কিন্তু দুর্যোগ আবহাওয়ার কারণে তারা কাজে আসেনি। তিনি মনে করেন, এই বৃষ্টি ফসলের কোনো ক্ষতি করবে না।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দীপঙ্কর দাশ জানান, শুক্রবার যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের ক্ষতি হয়নি। তবে আজ শনিবার ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বৃষ্টি হলে মসুরি ও আলুর ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। তাতে বেশ ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, পানি সরানোর প্রস্তুতি কৃষকের থাকতে হবে। দ্রুত সরানো সম্ভব হলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।