নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস আর নেই। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া বাঁশতলাস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৬৩) বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এই সিনিয়র সাংবাদিককে যশোর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি প্রেসক্লাব যশোরের সদস্য এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের কার্যনির্বাহী সদস্য। তিনি দৈনিক লোকসমাজের চিফ রিপোর্টার ও দৈনিক সংগ্রামের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার মৃত্যুর খবরে সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে দেখতে ও শোকাহত স্বজনদের সান্ত¡না দিতে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার বসভবনে যান যশোরের সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ। মাগরিবের পর জানাজা নামাজ শেষে তাকে শহরের বারান্দীপাড়া মোল্যাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরআগে বিকালে মরহুমের মরদেহ প্রেসক্লাব যশোরে আনা হয়। সেখানে তার রূহের মাগফেরাত কামনায় নেতৃবৃন্দ দোয়া করেন।
এদিকে, তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক ও প্রকাশক একরাম-উদ-দ্দৌলা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদসহ নেতৃবৃন্দ। এক শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক নেতা মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস’র জীবনাবসনের মধ্যদিয়ে যশোরের পেশাদার সাংবাদিকরা এক যোগ্য নেতৃত্ব হারালো। যা কোনদিন পূরণ হওয়ার মতো নয়। নেতৃবৃন্দ মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
মোস্তফা রুহুল কুদ্দুসের জীবনী : তিনি ১৯৬৩ সালে যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার গালদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যশোর শহরের বারান্দী মোল্লা পাড়ার স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তার পিতার নাম শামসুর রহমান বিশ্বাস। মাতা খোদেজা খাতুন। ১৯৮৩ সালে ফাজিল শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে দৈনিক স্ফূলিঙ্গের ঝিকরগাছা সংবাদদাতা হিসেবে মোস্তফা রুহুল কুদ্দুসের সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। এরপর তিনি যশোরের দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক কল্যাণ, দৈনিক রানার, খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল, ঢাকার ইউএনবিসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন। মৃত্যুকালে দৈনিক সংগ্রামের যশোর জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক লোকসমাজের চীফ রিপোর্টার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে ‘প্রথম আলো ট্রাস্ট’ আয়োজিত মাদক বিরোধী সেরা প্রতিবেদন পুরস্কার লাভ করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্য চর্চা, নাটক মঞ্চায়নে পুরষ্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে শিশুতোষ নাটক রচনা করেন। ১৯৯৬ সালে শিশু একাডেমির শিশু নাট্য প্রতিযোগিতায় কাজের ছেলে প্রতিযোগিতায় ক্যান্সার নাটকে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছড়া কবিতা গল্প, গান, নাটক নিয়মিত লেখালেখি করেন। প্রকাশিত বই ছয়টি। মঞ্চস্থ নাটক অর্ধশতাধিক। গল্প, নাটক, ছড়া, সাংবাদিকতা, ইসলামী ও পাঠ্যবইসহ আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন একটি স্কুলের শিক্ষিকা।
