নিজস্ব প্রতিবেদক: নীতি নৈতিকতা ঠিক রেখে পণ্য বিক্রির আহবান জানিয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেছেন, রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের আন্তরিক হতে হবে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হবে। গুজব রটিয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে ছাড় দেয়া হবে না।
যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ব্যবসায়ীদের সাথে এক বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই হুঁশিয়ারী দেন। জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ক্যাব যশোরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা কি বলতে চাইছি, নিশ্চয় আপনারা তা বুঝেছেন। ন্যায্য দামে পণ্য বেচাবিক্রিতে কোন রকমের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে প্রশাসনকে জানাবেন, দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু গুজব রটিয়ে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক করা হলে প্রশাসন চুপচাপ বসে থাকবে না।
রমজান মাস উপলক্ষে যশোরের ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ কার্ডের মাধ্যমে দু’দফায় টিসিবির পণ্য পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সৎ থাকলে বাজার ব্যবস্থায় কেউ অস্থিরতা ছড়াতে পারবে না। পাশের দেশ ভারত ও সৌদি আরবসহ পৃথিবীর অনেক দেশে রমজান, পূজা ও বড়দিন উপলক্ষে ব্যবসায়ীরাই পণ্যের দাম কমিয়ে দেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এই মানসিকতা থাকতে হবে।
ক্যাব যশোরের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহুর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নিয়ে পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কৌশল নিয়ে নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। তারা হলেন, যশোর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশারফ হোসেন বাবু, যশোর জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইদুল ইসলাম লিটন, হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতির নেতা তহিদ আলম লিটন, ফল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা জাহিদ ইকবাল প্রমুখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমিরুল ইসলাম রন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ করে দেশটিকে স্বাধীন করেছি, কিন্তু ভালো মনের মানুষ গড়ে তুলতে পারিনি। যার প্রভাব পড়েছে বাজার ব্যবস্থাতেও। ব্যবসায়ীদের অনেকে অধিক মুনাফা লুটে নিতে বিশেষ বিশেষ মৌসুমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
বেশ কয়েকজন আলোচক অভিযোগ তুলে বলেন, শোনা যায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে ষড়যন্ত্র হয় এবং এখনো হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা।
সমাপনী বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি অ্যাডভোকেট জহুর আহমেদ বলেন, পণ্যের সংকট সৃষ্টি ও দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে ব্যবসায়ীরা ভালো থাকতে পারবে না। সামনে রমজান মাস। তার আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভা চলাকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের পক্ষ থেকে নানা কর্মকান্ড সম্বলিত হ্যান্ডবিল বিতরণ করা হয়। হ্যান্ডবিলে ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন করা হলে করণীয় নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।