নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ধাক্কায় কাহিল অবস্থা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষের। এর মধ্যে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম নাভিশ্বাস তুলেছে। কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। এ অবস্থায় মানুষ ছুটছেন ওএমএস’র দোকানে। যারা ভুলেও কখনো ওএমএস’র দিকে উকি দেননি তারাই এখন দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে সরকারের স্বল্পমূল্যের চাল-আটা নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার যশোর শহরের বেশকিছু ডিলার পয়েন্টে নারী-পুরুষের হুমড়ি খাওয়া ভিড় দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর তখন দুইটা। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী পরিহিত এক বৃদ্ধ ওএমএস’র চাল-আটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন নাম গৌরাঙ্গ। নামের পদবী বলতে নারাজ তিনি। শহরের রাসেল চত্বর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, কখনো সরকারের স্বল্পমূল্যের চাল-আটা নেননি। বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামে নাভিশ্বাস উঠেছে। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই প্রথম তিনি ৩০ টাকা কেজির চাল ও ১৮ টাকা দামের আটা নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে জীবন বাঁচানো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বারান্দিপাড়া, রেলস্টেশন ও বিসিক এলাকায় ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়-নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভীড়। দীর্ঘলাইন লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ চাল-আটা নিচ্ছেন। এ সময় রহিমন, নূর ইসলাম, জরিনা বেগম, হাসিব আলী ও রহমান নামে ৪ জনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, শেখের বেটি কম দামে চাল-আটা দিচ্ছেন। আটা খুবই ভাল কিন্তু চাল মোটা। জীবন বাঁচাতে এখন মোটা-চিকুনের বাদ-বিচার করার সময় নেই। ডিলারের দোকান থেকে নিয়মিত তারা স্বল্পমূল্যের চাল-আটা নিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছেন।
হাফিজুর রহমান, কাশেম বাবু, রবিউল ইসলাম নামের ৩ ডিলার জানান, দুপুর দুইটা পর্যন্ত দোকান খুলে রেখে চাল-আটা বিক্রি করেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭০ জনকে চাল-আটা দেন তারা। স্বল্প বরাদ্দের কারণে সবাইকে নিয়মিত দেয়া যায় না। তবে চেষ্টা করি, কেউ যাতে খালি প্যাকেট নিয়ে বাড়ি না ফেরেন।
ষষ্টিতলাপাড়ার বাসিন্দা নূর নাহার নামের মধ্যবয়সী এক নারী জানান, তিনি নিয়মিত রাসেল চত্বর (চারখাম্বা মোড়) এলাকায় তোতা মিয়ার দোকান থেকে স্বল্পমূল্যের চাল-আটা নেন। বছর কয়েক ধরে তিনি মোটা চালের ভাত তুলে দিচ্ছেন সন্তানদের মুখে। তিনি বলেন, সব সময় ভাল চাল মেলে না। তবে আটার মান ভাল। তিনি বলেন, অনেকদিন সরু চালের ভাত খেতে পাইনি। সরকার আর একটু ভালমানের চাল দিলে বাচ্চারাও ভাত খেয়ে তৃপ্তি পেতো।
যশোর পৌর এলাকায় ১৩ জন ডিলার সরকারের স্বল্পমূল্যের চাল আটা বিক্রি করছেন। এরবাইরে বিভিন্ন উপজেলায় আরও ২৫ জন ডিলার রয়েছেন। সবমিলিয়ে জেলায় ৩৮ জন ডিলারের দোকান থেকে সীমিত আয়ের মানুষ চাল-আটা পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওএমএস’র দোকানে উপচেপড়া ভীড়ের নেপথ্যের কারণ বাজার দরে উর্দ্ধগতি। বৈশিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চরম জীবন সংকটে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষ। তারা বাধ্য হয়ে ওএমএস’র চাল-আটা নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। সাধারণত সকাল ৯টার আগে ডিলার পয়েন্টগুলো ওপেন হয় না। কিন্তু দেড়-দুই ঘন্টা আগেই মানুষ দোকানের সামনে ভীড় করতে থাকেন।
জেলা খাদ্য অফিসের প্রধান সহকারী উজ্জল কুমার দাশ জানান, প্রত্যেক ডিলার সপ্তাহে এক মেট্রিক টন চাল ও সমপরিমাণের আটা বরাদ্দ পান। লোকের উপস্থিতি বুঝে তারা প্রত্যেককে সর্বনি¤œ ৩ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা দেন। তবে শহরের ডিলারদের দাবি-প্রত্যেককে ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা দেয়া হয়।
অনেকে স্বল্পমূল্যের আটা নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন। এ শ্রেণির মানুষ সনাক্ত হলে তাকে প্রতিদিন চাল-আটা দেয়া হয় না। তাকে সপ্তাহে একদিন আসতে বলা হয়। এসব মানুষ ডিলারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারির মধ্যে থেকেই স্বল্পমূল্যের চাল-আটা বিক্রি করা হয়-এমনটিই দাবি বেশ কয়েকজন ডিলারের।