কমিটি গঠনে গঠনতন্ত্র মানা হয়নি
নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুদের হুমকি
সালমান হাসান: অবৈধ কমিটি পরিচালনা করছে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) শিক্ষক পরিষদ। গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে নির্বাচন ছাড়াই পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অফিস আদেশ দিয়ে কমিটিটি গঠন করা হয়। কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মজিদ ছিলেন এই কমিটি গঠনের হোতা। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।
গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে অগণতান্ত্রিক পন্থায় শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠনে চলে নানা নাটকীয়তা। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ সালের ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনও গঠনও করা হয়। ওই বছরের ১৫ জুলাই একাডেমিক কাউন্সিলের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সভার ঠিক ১৬ দিনের মাথায় ভোট গ্রহণ ছাড়াই শিক্ষক কাউন্সিলের কমিটি গঠন করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষের এক অফিস আদেশ কমিটি ঘোষণা হয়। তবে সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্তের কোথাও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠনের উল্লেখ নেই।
নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু শিক্ষকদের সে সময় হুমকি-ধামকিও দেয়া হয়। মনোনয়ন সংগ্রহ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক এক নেতা হুমকি দেয় তাদের। ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য ছকও কষা হয়। কাগজে-কলমে গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণা হলেও তফসিল ও মনোনয়নপত্র বিক্রি উন্মুক্ত করা হয়নি। অনেক শিক্ষক এই তফসিলের বিষয়ে অবগতও ছিলেন না। শেষতক নির্বাচন ছাড়াই অফিস আদেশ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। আর সেই অবৈধ কমিটি এখনও বহাল আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক নেতা এমনটিই জানিয়েছেন।
কলেজটির শিক্ষক পরিষদের গঠনতন্ত্রের পঞ্চম অধ্যায়ে নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিবিধানের উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশেষ অথবা অনিবার্য কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান না হলে সভাপতি তার প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে নির্বাচনের আয়োজন করবেন। গঠনতন্ত্র মোতাবেক কলেজের অধ্যক্ষ সভাপতি মনোননীত হন। কিন্তু তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মজিদ তার পছন্দের লোকেদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের নামে অফিস আদেশ দিয়ে শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠন করেন তিনি।
কলেজের শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষক পরিষদ একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। আর এই সংগঠনের একটি সংবিধানও আছে। সেখানে নির্বাচন আয়োজন সংক্রান্ত বিষয়ে দিকনির্দেশনা ও বিধিবিধানও আছে। তাই সংগঠনটির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত একাডেমিক কাউন্সিলে হতে পারে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি উপেক্ষা করে এভাবে গঠন করা কমিটি অবৈধ। তাদের দাবি, অনতিবিলম্বে এই অবৈধ কমিটি বাতিল করে নির্বাচন দিতে হবে। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে এই অবৈধ কমিটি শিক্ষক পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গত বছরের ৩০ জুন এমএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মজিদ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক মাস বৃদ্ধি করেন। তবে মেয়াদ বৃদ্ধি গঠনতন্ত্র মোতাবেক করলেও কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে করেন উল্টোটা। নিজের পছন্দের শিক্ষকদের কমিটিতে আনতে পরবর্তীতে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করেন। ভোটবিহীন কায়দায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের নামে এক অফিস আদেশে শিক্ষক পরিষদের কমিটি ঘোষণা করেন।
বিনা নির্বাচনে শিক্ষক পরিষদে বিভিন্ন পদে যারা মনোনীত হয়েছেন- সম্পাদক অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নাসিম রেজা, যুগ্মসম্পাদক- ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, কোষাধ্যক্ষ- রসায়ন বিভাগের প্রভাষক বিএম নাহিদ নেওয়াজ, ক্রীড়া সম্পাদক- ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শাহজাহান কবীর ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক- বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহুয়া রায়।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার জানান, শিক্ষক পরিষদের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। গঠনতন্ত্রে যে রকম নির্দেশনা আছে তার আলোকেই করণীয় নির্ধারণ করবেন।