* আবেদনপত্র এন্ট্রি করার সময় বাড়তি অর্থ আদায় * সোহাগ ও মেহেদীর নেতৃত্বে কাজ করে চক্রটি
* কাগজপত্র না পেয়ে অনেকের নামজারি নামঞ্জুর
তবিবর রহমান
যশোর সদর ভূমি অফিসে আউটসোর্সিং ও ডেপুটেশনে থাকা কর্মচারীদের নেতৃত্বে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। জমির নামজারি আবেদনপত্র জমা নেওয়ার নামে বাড়তি অর্থ আদায় এবং টাকা না দিলে নথি গায়েব করে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র মতে, সদর ভূমি অফিসে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত সোহাগ ও মেহেদীর নেতৃত্বে চক্রটি দীর্ঘদিন মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কোন ব্যক্তি বাইরে থেকে নামজারি এন্ট্রি করে অফিসে জমা দিতে গেলে সরকার নির্ধারিত ৭০ টাকার সাথে অতিরিক্ত ২০০ টাকা আদায় করা হয়। আর যদি কেউ টাকা না দেয় তাহলে তার ফাইল এসি ল্যান্ডের টেবিলে পৌঁছায় না। তখন কাগজপত্র না পেয়ে নামজারির আবেদন না মঞ্জুর করে দিচ্ছেন এসিল্যান্ড।
এমন অভিযোগ করেছেন যশোরে বিশেষ বাহিনীতে চাকরি করা কবির উদ্দিন সুইট। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের ভাইবোনদের নামে জমি নামজারি করতে গত জানুয়ারি মাসে তিনি ভূমি অফিসে ২৮টি ফাইল জমা দিয়েছিলেন। ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমার নামজারি নামঞ্জুর করে দেয়া হয়। পরে এসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এরপর এসিল্যান্ডের তদারকিতে মেহেদীর টেবিলের নিচ থেকে ফাইল বের করা হয়। এভাবে আমি হয়রানির শিকার হয়েছি। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন যশোর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেছেন, তার নথি পরে পাওয়া গেছে। ২৮টির মধ্যে ৩টির নামজারি করে দেয়া হয়েছে।
যশোরের উপশহর এলাকার আব্দুল সালামের ছেলে মো. শাহিন। জমির নামজারি করার জন্য বাইরে থেকে অনলাইনে আবেদন করে কাগজপত্র এন্ট্রি করতে যান যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে। বাইরে থেকে ২০০ টাকা দিয়ে তিনি আবেদন করে জমা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এতে আপত্তি করেন ভূমি অফিসের আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী সোহাগ। তিনি ফের ২০০ টাকা আদায় করে ছেড়েছেন।
যশোর টিএন্ডটি অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার আকতার খানও সদর ভূমি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, নামজারির জন্য ৯টি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু ‘নথি গায়েব হওয়ায়’ সবগুলোই নামঞ্জুর করে দেয়া হয়। পরে এসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করে তিনি পার পেয়েছেন। তিনি বলেন, যারা বাইরে থেকে অনলাইন আবেদন করে নিয়ে যায়; তাদের আবেদন ডাক ফাইলে রাখা হয়। তার আবেদনগুলোও ডাক ফাইলে রাখা হয়েছিল। সেসময় রিসিভ কপি দেয়া হয়নি। আর যারা ভূমি অফিসের আউট সোর্সিংয়ের লোকজনের মাধ্যমে আবেদন করেন তাদের ফাইল যত্নে থাকে। যথা সময়ে এসিল্যান্ডের টেবিলে উঠে যায়। ভূমি অফিসের কতিপয় লোকজনের কারণে এমন নয়-ছয় হচ্ছে।
সূত্র মতে, ভূমি অফিসের রাজস্বখাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও ডেপুটেশনে ও আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা সোহাগ, মেহেদী, শাহিনুর, হুমায়ুন, আল-আমিনসহ কয়েকজন ঘুষ বাণিজ্য ও নথি গায়েবের সাথে যুক্ত রয়েছেন। মেহেদী অফিসের স্থায়ী কোন কর্মচারী না হলেও এসিল্যান্ড অফিসের নামজারি সংক্রান্ত পাসওয়ার্ড তার কাছে থাকে। এসিল্যান্ডের অফিসে বসে মেহেদী কাজ করায় অনেকে তার কাছে ধর্না দেয়। নামজারি করতে আসা কারো কারো সাথে তিনি গোপনে চুক্তি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেহেদী। তিনি বলেন, ‘স্যার যখন কাজ দেন, তখন পাসওয়ার্ড দেন। ওটা স্যারের বিষয়।’
আর অভিযুক্ত সোহাগ দাবি করেছেন, ফাইল হারায় না বা গায়েব হয় না। হাজার হাজার ফাইল, অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, আমরা ৫-৬ জন আউট সোর্সিংয়ে কাজ করি। অতিরিক্ত যে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। সেটা থেকে মাস শেষে আমাদের বেতন দেয়।
এদিকে গত ৩০ দিনে যশোর সদর ভূমি অফিসে ২৪শ নামজারির আবেদন জমা পড়েছে। বাড়তি ২০০ টাকা নিলে এ হিসেবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়। যা থেকে আউট সোর্সিংয়ে কর্মরতদের বেতন দেওয়া হয়। তবে সে টাকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
জানতে চাইলে যশোর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, বাইরে থেকে আবেদন করলে নথি এন্ট্রির সময় বাড়তি ২০০ টাকা নেওয়ার কথা না। আর অফিসের আউট সোর্সিংয়ে কর্মরতদের মাধ্যমে আবেদন করলে সেটা তারা নিবে। এটাকা থেকে তাদের বেতন দেয়া হয়। এ ধারা গত একযুগ ধরে চলে আসছে। কোন অনিয়মের সাথে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত নন।