মহিউদ্দিন সানি, নরেন্দ্রপুর (রূপদিয়া) থেকে: যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া বাজারে জমে উঠেছে তরমুজের বেঁচাকেনা। গত দুই বছর করোনা ভাইরাসের চোঁখ রাঙানির পর এবার মৌসুমের প্রথম থেকেই জমতে শুরু করেছে রূপদিয়া তরমুজ-বাঙ্গির পাইকারি মোকাম।
সরেজমিনে রূপদিয়া বাজারের তরমুজ-বাঙ্গির পাইকারি হাটের আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ফাল্গুনের শুরু থেকেই কৃষকরা ট্রাক যোগে ভোলা,পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, রাঙাবালী, কুরালিয়া, পানপুরি থেকে তরমুজ এনে রূপদিয়া বাজারে পাইকারি দামে ছোট, মাঝারি ও বড়সহ বিভিন্ন আকারের তরমুজ বিক্রি করছে। এখানকার ফল ব্যবসায়ীরা এসব তরমুজ ক্রয় করে রাজধানীসহ সারাদেশে পাইকারি দরে বিক্রি করে।
আড়তের ভেতর বাহিরে থরে থরে সাজানো তরমুজ। সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে দিনমজুররা আড়তে মাল এনে মজুদ করছে। ভেতরে চলছে দরদাম। তরমুজ বেচা-কেনার দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। ভোররাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাইকারি বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতারা।
রূপদিয়া বাজারের পশ্চিম দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়কের দুই পাশে স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় ৪০ টি পাইকারি ব্যবসায়ী তরমুজ ক্রয় বিক্রয় করছে। এসময় কথা হয় পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার লোন্দা গ্রাম থেকে আসা তরমুজ চাষী মোঃ হাবিব হোসেনের সঙ্গে। এগারো বছর ধরে তিনি রূপদিয়া বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসেন। এবার তিনি ২৪ বিঘা জমিতে বিগ ফ্যামিলি বা বাংলালিংক জাতের তরমুজ আবাদ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হতে পারে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো না। ফলন কম। ২৪ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করলে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা হবে।
ওখানকার একজন পুরোনো ব্যবসায়ী “ভাই ভাই ফল ভান্ডার’এর প্রোপাইটর তরিকুল ইসলাম জানান, এবার প্রতি ১০০ টি ৮-১২ কেজি ওজনের তরমুজ ৩১ হাজার টাকায় ক্রয় করছি। ৩/৪ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ টি ৫ হাজার টাকা আর প্রতি শত ছোট তরমুজ ২ হাজার টাকায় ক্রয় করছি। এবছর ফাল্গুনের ১৫ তারিখ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ আসা শুরু করেছে। এ বাজার বৈশাখ মাস পর্যন্ত থাকবে।
উৎপাদকরা জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে তারা এবার মালের দাম ভালো পাচ্ছেন। এখানকার আড়তদারদের ব্যবহার ভালো এজন্যই দুর থেকে এখানে তরমুজ বিক্রি করতে আসেন তারা।
আড়তদাররা বলছেন, হাট মালিক ও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন। সকলের সহযোগিতা পেলে এবং প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের কবলে না পড়লে তারা এবছর ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
স্থানীয়রা জানান, বছরের মৌসুমী ফল তরমুজ, বাঙ্গি, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি ওঠার আগ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা অনেক বছর ধরে এ বাজারে এসে দোকান ঘর, গোডাউন এমনকি খালি জায়গাও চুক্তিতে ভাড়া করে অস্থায়ীভাবে আড়ৎ স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
ক্রেতাদের মাঝে সাধারণত বিগ ফ্যামিলি বা বাংলালিংক এবং কালো জাতের তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাজারে তরমুজের প্রচুর সরবরাহ থাকায় উৎপাদক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা সবাই খুশি। দাম একটু বেশি হলেও এ নিয়ে কারও তেমন অভিযোগ নেই।