নিজস্ব প্রতিবেদক: হোসেনউদ্দীন হোসেন একদিকে যেমন লাঙলের ফলা দিয়ে মাটির বুকে আঁচড় কেটে ফসল ফলান অন্যদিকে কলম দিয়ে কাগজের বুকে ফুটিয়ে তোলেন অনন্য সাহিত্য।
তিনি লিখছেন ছাত্রজীবন থেকে এবং এই ৮১ বছর বয়সেও সেই লেখালেখি অব্যাহত আছে। ১৯৭৪ সালে তার প্রথম বই ‘যশোরাদ্যদেশ’ প্রকাশিত হয়। সেই থেকে একে একে বের হয়েছে ২৬টি বই। ভালো কিছু লিখছেন বলেই বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারটি তিনি পেয়েছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২২ তিনি গ্রহণ করেছেন পুরস্কারটি। তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ৪ ভরি ওজনের গোল্ড মেডেল, ৩ লাখ টাকার চেক, সম্মাননা পদক এবং সনদপত্র।
শুধু বাংলা একাডেমি নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকে পেয়েছেন পুরস্কার। ২০০৬ সালে ক্যাম্ব্রিজ (ইংল্যান্ড) থেকে তাঁকে টপ-হানড্রেট রাইটার্স হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ক্যাম্ব্রিজ স্বর্ণপদক পান। কলকাতা বিধান নগর মেলা (সল্টলেক, কলকাতা) পদক, শিমুল পলাশ (ভারত) সম্মাননা পদক, লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক (কলকাতা) পদক পান। কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বাংলা বিভাগে হোসেনউদ্দীন হোসেনের ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাসটি এম এ ক্লাসে পাঠ্যসূচি করা হয়। তিনি আরো ২২টি পুরস্কার পেয়েছেন।
হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গাজী আজিজুর রহমান এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, লেখক মূলত একজন শ্রমশীল অগ্রসর চিন্তাশীল ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্রয়ী গদ্যশিল্পী। তাঁর অমৃত বৈদেশিক প্রকাশ হলে তিনি একজন মননশীল বিশ্বসাহিত্য বিশ্লেষক প্রাবন্ধিক হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ‘ফ্লাড অ্যান্ড এ নুহ’ প্রকাশিত হলে তিনি লাভ করেন দুর্লভ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তার ছোট গল্পসমূহ একটা ব্যতিক্রমী বিষয় হিসেবে পাঠককে সম্মোহিত করেছে। গল্পগুলো এতই জীবনঘনিষ্ঠ ও শিল্প সমৃদ্ধ যে একটি গল্পতো শর্ট ফিল্ম হবার মর্যাদা পেয়েছে।
মুক্তবুদ্ধির মানুষ হোসেনউদ্দীন হোসেনের প্রতিটি লেখা শ্রম ও ঘাম দিয়ে চিন্তাস্রোতে লেখা। তিনি সাহিত্য শিল্পকে পাবার জন্য বুকের রক্ত ঝরিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার সাহিত্য কর্ম। এই সাধনা প্রকৃত শিল্পীর সাধনা।
হোসনউদ্দীন হোসেনও এই কথাটা ধারণ করেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সাধনার ব্যাপার। সাহিত্য হচ্ছে রূপ দেয়া। সাহিত্য সৃষ্টির জন্য দরকার শিল্পবোধ। লেখককে বুঝতে হবে যেটা লেখা হচ্ছে সেটা সাহিত্যে রূপ পেয়েছে কি-না? সাহিত্যের রূপ যদি না পায়, তাহলে টিকবে না।
কলিম উদ্দিন-আছিরননেসার সন্তান হোসেনউদ্দীন হোসেন ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন সে বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘সাহিত্য ভবন’। ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ওই বাড়িতেই সহধর্মিণী হাসিনা আক্তারকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছেন। তাঁর ৪ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত।