নিজস্ব প্রতিবেদক :
আট বছর আগে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে পেট্রোল বোমায় নিহত যশোরের জাসদ নেতা নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশা তাসনিমের স্বজনদের খোঁজ নিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বুধবার বিকালে যশোর শহরের ঘোপস্থ বাড়িতে গিয়ে তিনি নিহতের স্বজনদের খোঁজ নেন। এ সময় তিনি পপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগমের হাতে সহায়তার তিন লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকতসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করলে আট যাত্রী নিহত হন। এরমধ্যে ছিলেন যশোরের পপলু ও তার মেয়ে মাইশা। তাদের সঙ্গে পপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগম ও ছোট ছেলে আসিফ ইমতিয়াজ জামান থাকলেও ভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যান।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০ তম জন্মদিনে কেশবপুরে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যশোর আসেন প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে বিকালে পাপলুর স্বজনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এসময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পপলু ও মাইশার কাটানো বিভিন্ন ছবি দেখেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এসময় সাংবাদিকদের বলেন, যখনই নির্বাচন আসে, তখনই ৭১ এর পরাজিত শক্তির দোসরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই আগুন সন্ত্রাসে নামে। রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো আগুন সন্ত্রাসীরা যাতে ফের এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই দিকে সরকার সজাগ রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিএনপি জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করে। মায়ের চোখের সামনে সন্তান-স্বামী জ্বলে পুড়ে মারা যাচ্ছে; এর চেয়ে কষ্টকর দৃশ্য পৃথিবীতে আর হয় না। আমি আজ তাদের স্বান্তনা দিতে আসেনি; শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। যারা নির্মম হত্যাকা-ের হোতা, যারা এই হত্যাকা- চালিয়েছে তাদের এই সমাজব্যবস্থা-রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে চিরতরে দূরে রাখতে হবে। কারণ তারা সুযোগ পেলেই আবারও হত্যাকা-ের পুণরাবৃত্তি ঘটাবে। মাইশার মতো মেধাবি মেয়ের নির্মম হত্যাকা-ের মতো ঘটনা সারাদেশবাসীকে নাড়া দিয়েছিলো।
এদিকে, আট বছর ধরে স্বামী ও মেয়ের স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন মাফরুহা বেগম। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সাথে সেদিনের স্মৃতির কথা বলতে যেয়ে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বলেন, সেদিন কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন, মাইশা বাসে তার পাশেই বসেছিল। কক্সবাজার থেকে তোলা ছবিগুলো বারবার দেখছিল আর বাড়িতে ফিরে কখন সবাইকে দেখাবে সে নিয়ে উদগ্রীব ছিল। কিন্তু হঠাৎ কালো ঝরে মাইশার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
মাফরুহা বলেন, বাসে পেট্রোল বোমাটি ছোড়ার পর আমি ও মাইশা দু’দিকে ছিটকে পড়ি। আমি মাথায় আঘাত পাই। এ সময় আমার কানে ভেসে আসছিল মা আমাকে বাঁচাও। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি হাসপাতালে। পরে জানতে পারি আমার স্বামী আর মেয়ে বেঁচে নেই।
মাফরুহা জানান, ঘটনার পরে সরকার দ্বিতীয় দফায় ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলো। আর ঘরভাড়ার টাকার দিয়েই এখন সংসার চলে। ছেলের লেখাপড়া শেষ হয়েছে কয়েক মাস। সে এখন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছে। বেঁচে যাওয়া একমাত্র সন্তান ইমতিয়াজকেই নিয়েই এখন বাঁচার ইচ্ছা। ছেলাটার একটা সরকারি চাকরি হলে জীবনের শেষ সময়টুকু নিশ্চিন্তে পার করতে পারতাম। একই সাথে তার মতো আর অন্যকোন পরিবারে পেট্রেল বোমার হামলার শিকারে সাজানো সংসার ভেঙ্গে চুরমার না হয় এমনটি কামনা করেন তিনি।