নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বাবার পরিচয় না পাওয়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকা যমজ দুই সন্তান ও মানসিক ভানসাম্যহীন তাদের মাকে। যমজ ভাই-বোনকে পাঠানো হয়েছে খুলনার ছোট মণি নিবাসে আর ভানসাম্যহীন তাদের মাকে নেয়া হয় ঢাকার কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে আলাদা দু’টি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদেরকে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। গাড়িতে নেওয়ার আগে যমজ দুটি শিশুকে পরানো হয় গোলাপি রঙের নতুন জামা। আর ভারসাম্যহীন তাদের মাকেও পরানো হয় লাল আর হলুদের প্রিন্ট শাড়ি। এদিকে আইনি জটিলতায় নবজাতকদের এতোদিন নাম রাখা না গেলেও এদিন সকালে শিশুদুটির নাম রাখা হয়। হাসপাতাল ছাড়ার আগে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জমজ দুই শিশুর নাম রাখা হয় মোহাম্মদ মুসা ও মোছাম্মদ মাইশা।
বিদায় জানান যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা অফিসার রুবেল হাওলাদার। পরে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারও তাদেরকে বিদায় জানান। মা মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকতা মুনা আফরিন এবং শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশাকে নিয়ে খুলনার ছোটমনি নিবাসের উদ্দেশে যাত্রা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তার দুই সন্তানকে পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা ও দুই সন্তানকে দু’টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রেরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে।
যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ বলেন, মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে আসার পর আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি এবং দেখাশোনা করেছি। সন্তান দুটি তাদের মায়ের কাছে নিরাপদ নয়। যখনই শিশুদুটিকে যখন দেওয়া হয় তখনই তাদের মা তাদের ফেলে দিচ্ছে। মা ও দুই সন্তানকে এখন সরকারি দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রেরণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকতা মুনা আফরিণ বলেন, তিনি মা মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে হস্তান্তর করে ফিরবেন। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বরর মা ও দুই নবজাতক যশোর হাসপাতালে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অফিস, আনসার সদস্য, এনজিও কর্মীদের সাথে তিনি গত ১৮দিন তাদের দেখভাল করেছেন। গত সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় মা ও সন্তানদের এই দুই আশ্রয়কেন্দ্রে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর গত বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মা ও দুই নবজাতকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন। এদিকে, ১৮ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে জমজ সন্তান ও তাদের মা চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের স্বজনদের সন্ধান পাওয়া দেলেও তারা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের পরিত্যক্ত ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী জমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাদেরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের কর্মকর্তারা ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা মাহিনুরের মা ও ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা মাহিনুর ও তার সন্তানদের নিতে রাজি হয়নি। এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রসূতি মা ও দুই নবজাতকের তত্ত্বাবধায়ন করে। সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইজন নারী আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।