নাগরিকের কর্মকাণ্ড দেখে রাষ্ট্রের শেখা উচিত : অমিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের নলডাঙ্গা রোড এলাকার গৃহবধূ মেঘলা খাতুন। ওয়ার্কশপে কাজ করা স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এজন্য বাড়িতে বসে কাজ করে বাড়তি আয়ের চিন্তা করছিলেন। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য তাও করতে পারছিলেন না। এমন সময় মেঘলা খোঁজ পান যশোরের রিপন অটো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সামাজিক সংগঠন আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনামূল্য সেলাই প্রশিক্ষণ প্রগ্রামে ভর্তি হন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পেয়েছেন সেলাই মেশিন, কাপড় ও সেলাই কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার জন্য নগদ অর্থ।
শুধু মেঘলা না মেঘলার মতো সংগঠনের ৬ষ্ঠ ব্যাচের প্রশিক্ষণ নেয়া ৩০ জনের হাতে বুধবার সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে ৩০ জনকে সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান
বুধবার বিকেলে শহরের আরএন রোড নতুনবাজার মাঠ প্রাঙ্গনে আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশেনের ২০ বছর পূর্তি উৎসবে এসব নারীদের সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের যশোর-৩ আসনে মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
তিনি বক্তব্য বলেন, আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশন যে কাজ করছে তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্র ব্যর্থ বলে কিছু ব্যক্তিকে এমন দায়িত্ব কাঁদে তুলে নিতে হয়।
৫৪ বছরে বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন থেকে এখন যা কিছু অর্জন করেছে তা দেশের জনগণের কর্মস্পৃহার ফল। বাংলাদেশের নাগরিকের কর্মকাণ্ড দেখে রাষ্ট্রের শেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, নারীদের বিনামূল্য সেলাই প্রশিক্ষণের ধারণা প্রথমে এসেছিল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাথায়। তিনি জাতীয় মহিলা সংস্থা খুলে সর্বপ্রথম নারীদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সেই সাথে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছিল। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ দেশে যত রকমের ভাতা আছে তা চালু করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সর্বপ্রথম সবার জন্য শিক্ষা, মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনামূল্য বই দেয়ার প্রবর্তন করেছিলেন।
যশোরের নাগরিকদের সুষ্ঠু ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন উপহার দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি অঙ্গন সচল থাকলে সমাজ মাদকমুক্ত থাকে। তা যদি বিএনপি সরকার গঠন করে ও যশোরবাসী যদি আমাকে সুযোগ দেন তাহলে যশোর ক্রীড়াঙ্গন সচল রাখা হবে। ক্রীড়াঙ্গন সচল রাখা মানে স্টেডিয়াম সচল, প্রতিটা পাড়ামহল্লায় মাঠ সচল থাকবে। এছাড়া তিনি যশোরে নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন।
বিএনপির সরকার গঠন করলে চিনি, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য আর্থিক সহায়তার জন্য পারিবারিক কার্ড করে দেয়া হবে। এছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মেধা ও যোগ্যতায় দেশে দেড়কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
‘আমরা তামান্নার নুরাদের মত মানুষদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজবো। আপনার ইচ্ছা কর্মস্পৃহা, অনুপ্রেরণা থাকলে কোন বাধায় বাঁধা মনে হবে না। তেমনি আপনারা চাইলে আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে যশোরের কোন সমস্যা আমাদের কাছে সমস্যা মনে হবে না।’
অনুষ্ঠানে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের মহল্লা সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খান মো. শফিক রতনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ‘পা দিয়ে লিখে’ এইচএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অদম্য মেধাবী তামান্না নূরা। তিনি তার জীবনের নানা সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলেছি। আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনের প্রতিটা কাজে সফল হওয়া যায়।
রিপন অটোস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এজাজ উদ্দিন টিপুর পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়াজ উদ্দিন রিপন।
রিপন তার স্বাগত বক্তব্যে আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশনের বিভিন্ন শুরু কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০০৫ সাল থেকে আসাদ স্মৃতি সামাজিক কাজ করে আসছে। আসাদ স্মৃতি ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত ৮০০জন নারী ও শিশুকে ফ্রিতে কুরআন শিক্ষা, ১৩০ জনের উপর নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ১৩০ জনকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া এলাকার মানুষের জন্য মাসে দুই দিন ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এ ক্যাম্পে একজন গাইনি, শিশু ও দুইজন মেডিসিন চিকিৎসক থাকে।
তিনি বলেন, এভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যার যার অবস্থা থেকে যদি এগিয়ে আসে; তাহলে সমাজে আর বৈষম্য থাকবে না।’
প্রশিক্ষণার্থী মেঘলা খাতুন বলেন, দর্জি প্রশিক্ষণের জন্য অন্য জায়গায় অনেক টাকা ফি দিতে হয়। তবে রিপন অটো আমাদের ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। শুধু প্রশিক্ষণই দেননি। সাথে সেলাই মেশিন ও নগদ টাকা দিয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছি। তিনি রিপন অটোর রিপন ও এজাজ উদ্দিন টিপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়াড় হোসেন খোকন, অ্যাডভোকেট শহীদ আনোয়ার, আরএন রোড ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মোস্তফা গোলাম কাদের, সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাসুম, মোটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর সার্কেলের সভাপতি শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু, ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, যশোর রিপন অটো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সামাজিক সংগঠন আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশন থেকে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬ টা ব্যাচে ৫০ জন করে মোট ৮০০ নারীকে কোরআন ও দ্বীন শিক্ষা গ্রহন করেছে। প্রতি বছর অসহায় হতদরিদ্র মেধাবী ১৪০ জন শিশুকে বার্ষিক এককালীন ভর্তি ফি, ২ সেট স্কুল ড্রেস, ১টা স্কুল ব্যাগ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে প্রতিমাস ৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের পাশাপাশি ১৩০ জন নারী উদ্যোক্তাকে এ পর্যন্ত উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন, আর্থিক সহায়তা দিয়ে আত্মনির্ভশীল করা হয়েছে।
