সুনীল ঘোষ: যশোরে খুচরা দরে মিলছে না সয়াবিন তেল। বেশি দামের তেল দোকানে তুলছেন না মাঝারি গোছের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগের সেই চড়া দাম নিচ্ছেন, কিন্তু দিচ্ছেন না রশিদ। তাই তেল বিক্রি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সচেতন ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ব্যর্থতায় গুণতে হচ্ছে জরিমানা। এসব ঝুট-ঝামেলা এড়াতে তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বেশ কয়েকজন দোকানী।
বড়বাজারের হাটচান্নিসহ শহরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য মাঝারি গোছের পাইকারি ও খুচরা দরে তেল বিক্রির দোকান। সপ্তাহখানেক আগেও এসব দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ তেল বিক্রি বন্ধের কারণ হিসেবে দোকানীরা জানান, গত কয়েক মাসধরে তেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চালু রেখেছে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয় মূল্যে তেল-মসুরির ডাল, চিনি ও পেঁয়াজ বিক্রি। সর্বশেষ ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বোতলজাত ও খোলা ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়। নতুন দামে লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা করা হয়। ৫ লিটারের বোতলে ৩৫ টাকা কমিয়ে করা হয় ৭৬০ টাকা। খোলা সয়াবিনের লিটারে ৪ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৩৬ টাকা।
এরআগে ১৪ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বিক্রি ও সরবরাহ পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে সরকার।
কিন্তু উর্দ্ধমুখী দামের রাশ টেনে ধরা যায়নি। উল্টো সংকট প্রকট হয়েছে। এ সংকট কৃত্রিম কি-না তা খতিয়ে দেখতে বাজার মনিটরিং করার নির্দেশ পায় প্রশাসন। ভোক্তা অধিকারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টর নিয়মিত বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তেলের মজুদ ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দরে বেচাবিক্রির সত্যতা পেলে করা হচ্ছে জরিমানা।
হাটচান্নির মাঝারি গোছের পাইকারি ও খুচরা দরে নিত্য পণ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠান মা কালি ভা-ারের সত্ত্বাধিকারী মধুসূদন পাল বলেন, বেশি দামে তেল কিনে লোকসানে বিক্রি করা সম্ভব না। যেকারণে তিনি মাস দু’য়েক কোন প্রকার ভোজ্য তেল বিক্রি করছেন না। তিনি বলেন, পাইকারী ব্যবসায়ী যখন রশিদ দিচ্ছে না, তখন বেশি দরে বিক্রির দায়ভার গড়াচ্ছে ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে। প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এই ঝুট-ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে আপাতত তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছেন-দাবি করেন মধু।
তার মতো অধিকাংশ দোকানী ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে চলতে ভোজ্য তেলের বেচাবিক্রি বন্ধ রেখেছেন। শ্যামা স্টোর, নিউ গোবিন্দ স্টোর, দীলিপ স্টোরসহ বড় বাজারের অনন্ত ৮০ শতাংশ দোকানে সয়াবিন তেল নেই। তবে কিছু দোকানী সামান্য কিছু তেল রাখছেন, শুধুমাত্র দীর্ঘদিনের পরিচিত ক্রেতার জন্য। স্টেশন বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। পরিচিত ক্রেতার বাইরে নতুন মুখের কাছে তেল বিক্রি করছেন না অনেক দোকানী।
হাটচান্নির ইয়াছিন স্টোরের মালিক ইয়াছিন আলী জানান, মুকুল ওয়েল মিল আগের দামেই তেল বিক্রি করছে। সম্প্রতি প্রশাসন অভিযান জোরদার করায় প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি দরের রশিদ দিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সয়াবিন বিক্রি করে জরিমানা গুণতে চান না-যোগ করেন তিনি।
বুধ ও বৃহস্পতি দু’দিন বেজপাড়ার প্রধান সড়ক, দরবেশের মোড়, বকচর, বারান্দি মোল্লাপাড়া, পালবাড়ির মোড়, নিউমার্কেট, ষষ্টিতলার মুজিব সড়ক, বসন্ত কুমার সড়ক, পিটিআই রোড, টিবি ক্লিনিকপাড়া, নাজির শংকরপুর ও চোরমারা দীঘিরপাড়সহ আরও বেশকিছু এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে একই তথ্য পাওয়া গেছে।
চোরমারা দীঘিরপাড়ের সুমন স্টোরের মালিক আব্দুর রব জানান, এলাকাটিতে গরীব মানুষের বসবাস বেশি। ১০/২০ টাকার ক্রেতা বেশি। উর্দ্ধমুখীর বাজারে খুচরা তেল বিক্রি করে আসল উঠছে না। যেকারণে তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি-জানান রব।
সরেজমিনে অধিকাংশ দোকানীর মুখ থেকে প্রায় একই ধরণের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ স্বীকার করেছেন, অপরিচিত ক্রেতার কাছে তেল বিক্রি করছেন না।
নিউটাউনের রশিদ ও বারান্দি মোল্লাপাড়ার কাশেম জানান, অধিকাংশ দোকানে গেলে বলা হচ্ছে সয়াবিন তেল নেই। তারা বলেন, কি করবো বুঝতে পারছি না।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সংকট থাকলেও তা দ্রুতই কেটে যাবে বলেও মনে করেন সরকারের এই কর্মকর্তা।