রায়হান সিদ্দিক: যশোর ফল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১১টি পদে লড়ছেন ২৩ জন প্রার্থী। এরই মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুনে জাকজমক পরিবেশ তৈরি হয়েছে মণিহার চত্বরে অবস্থিত ফল ব্যবসায়ী মার্কেটে। বর্তমান কমিটির কেউ কেউ পদ পরিবর্তন করে নতুন পদে নির্বাচন করছেন। আবার বেশ কয়েকটি নতুন মুখও ভেসে উঠেছে এবারের নির্বাচনে। এরই মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাইদুর রহমান রিপন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে আম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম লিটন ও আনারস প্রতীকে আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক পদে উড়োজাহাজ নিয়ে লড়ছেন মনিরুজ্জামান মনির ও চেয়ার প্রতীকে ইকবাল হোসেন চুন্নু। অন্যদিকে সহ সভাপতি রবিউল ইসলাম রবু (হরিণ), ফজলুল হক (বাঘ) ও মিজানুর রহমান মিজান (টেলিফোন), সহ সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম রবু (ছাতা), খন্দকার অলিউজ্জামান মিঠু (মোরগ) শহিদুল ইসলাম (সাইকেল), সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান (আঙ্গুর), তরিকুল ইসলাম (কাপ পিরিচ) সুমন শেখ (ফুটবল), প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম (ফুটবল) মাহফুজুর রহমান মফিজ (বই), দপ্তর সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি (ডালিম) জাবেদ মোল্লা (দোয়াত কলম), কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামীম (গোলাপ ফুল) আনোয়ার হোসেন (দেয়াল ঘড়ি) এবং সদস্য এ কে রওশন জাবেদ (ব্যাট বল), মিজান বাবু (হাতপাখা) ও মনির হোসেন (তালা চাবি) নিয়ে লড়ছেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে নির্বাচনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয় লাভ করেন এস এম সাইফুল ইসলাম ও মনিরুজ্জামান। এবারো তারা আশাবাদী ব্যবসায়ীরা তাদেরকেই নির্বাচিত করবেন।
এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে লিচু ব্যবসায়ীরা যশোর-খুলনা সড়কের ওপর বাজার বসাতো। এতে করে রাস্তা সব সময় জ্যাম থাকতো। ময়লা-কাদা পানিতে একাকার হয়ে থাকতো পুরো মণিহার এলাকা। মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারতো না। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় সেই অবস্থার অবসান ঘটেছে। লিচুর বাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন মানুষ স্বাচ্ছন্দে লিচুর মার্কেট থেকে লিচু বেচাকেনা করতে পারে। এছাড়াও যখনই আমাদের কোন ব্যবসায়ী বিপদে পড়েছেন সাধ্যমত পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমরা একটি পরিবারের মতন করে এখানে ব্যবসা করি। অতিতে আমি সাধ্যমত ব্যবসা কল্যাণ সমিতির সকল সদস্যের জন্য সাধ্যমত কাজ করার চেষ্টা করেছি পুনরায় নির্বাচিত হলে আগামীতেও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করে যাবো।
মনিরুজ্জামান বলেন, আমি সমিতি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। এখন পর্যন্ত আমাদের ব্যবসায়ীদের মাঝে কোন সমস্যা হয়নি। অতীতে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি ব্যবসায়ীদের যে কোন বিপদে পাশে থকার জন্য। তবে করোনাকালিন সময়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে তাই সমিতির যে সব সদস্য ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায় তাদেরকে সমিতির পক্ষ থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। সমিতির যে কোন সদস্যকে ঋণ দেয়ারও ব্যববস্থা করা হবে। সমিতি ছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী আছেন, সেই সব প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোয় ফল পট্টিতে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারেনি। আগামীতেও প্রবেশ করতে পারবে না। তার জন্য সকল ব্যবস্থা করা হবে। এক কথায় সমিতির উন্নয়নের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমি পূণরায় নির্বাচিত হলে তা করা হবে।
সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের ইচ্ছায় আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে ব্যবসায়ী ও সমিতির কল্যাণে কাজ করবো। ফল ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সমিতির সিনিয়র সদস্যদের মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক স্থান দেয়া হবে। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে সমিতির নিজস্ব সম্পদ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। আগামীতে এসব সমস্যা দূর করে নিজস্ব সম্পদ বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, আমি ভোটারদের কথা দিয়েছি যদি আমি আমার কথা মতো কাজ না করতে পারি এক বছেরর ভেতরেই আমি পদত্যাগ করবো।
সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ইকবাল হোসেন চুন্নু বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের ভেতর কোন দন্দ্ব নেই। সমিতি পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি প্রয়োজন তাই সাধারণ ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতাকে নির্বাচিত করে। যদি ভোটাররা আমাকে যোগ্য মনে করেন এবং আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি শতভাগ চেষ্টা করবো ব্যবসায়ীদের মাঝে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করার। এবং সকলের আপদে বিপদে বন্ধুর মতো পাশে থাকার। তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সমিতির সদস্যদের জন্য কল্যাণ ফান্ড বৃদ্ধি করা হবে। যাতে করে কোন সদস্য যে কোন দুর্ঘটনা কিম্বা অসুস্থ হলে সমিতির পক্ষ থেকে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা যায়।
এ দিকে নির্বাচন নিয়ে বেশ উৎসাহ কাজ করছে ভোটারদের ভেতরে। ভোটাররা বলছেন, আমাদের এখানে রাজনৈতিক কোন বিষয় নেই। আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করি। ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন ও যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করবার জন্য যশোর ফল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ঘঠিত। এখন পর্যন্ত যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই নিজ জায়গা থেকে সমিতি ও ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করেছেন। এখানে আলাদাভাবে কাউকে কিছু বলার নেই। তবুও নির্বাচন মানে হার জিত তো থাকবেই। তাছাড়া প্রার্থীরা সবাই আমাদের কাছে আসছে ভোট চাচ্ছেন। এখন যার যাকে ভাল মনে হবে সে তাকেই ভোট দিবে। নিশ্চয় যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি সেই এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করবে।
নির্বাচনে কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, সদস্য হিসেবে দায়িত্বে পালন করছেন সমাজসেবা অফিসার আশিকুজ্জামান তুহিন এবং সহকারী হিসেবে আছেন শরিফুদ্দীন আহম্মদ।
নির্বাচন কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, আগামী ২৯ জানুয়ারি সংগঠনের কার্যালয়ে ৫৬৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে করোনা উর্দ্ধমুখী হবার কারনে আমরা প্রার্থীদের সকল গণজমায়েত, মিছিল, মিটিং বা মাইকিং করতে নিষেধ করেছি। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে নির্দিষ্ট দিনে সাস্থ্যবিধি মেনে ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হবে।