আবদুল কাদের
কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ পুরনো। সরকার অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের সিস্টেম করেছেন ভ্যাটদাতাদের সুবিধার্থে। ঘরেই বসেই তারা সরকারকে ভ্যাট প্রদান করতে পারবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে অনলাইনে ভ্যাট চালান প্রদান করার পরও ব্যবসায়ীদের কাস্টম অফিসে এসে চালানের কপি দেখাতে বাধ্য করছেন কাস্টম কর্মকর্তারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করোনার পর থেকে দেশে ব্যবসায়িক মন্দা চলছে। বিশেষ করে যারা আমদানিকারক, তারা পণ্য আনতে না পেরে ব্যবসা করতে পারছেন না। কিন্তু তারপরও জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় ও ঘূষ গ্রহণ করছেন কাস্টম। এতে করে কাস্টম নিয়ে ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত ৫ বছর ধরে পূরণ হচ্ছে না। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ১২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কম আদায় হয়েছে এক হাজার ৮৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৩৩৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
কাস্টম কমিশনারেট যশোর অফিসের অধীনে ১০টি জেলা রয়েছে। এসব জেলায় ভ্যাটদাতা রয়েছেন ২০ হাজার ৯৬০ জন। এরমধ্যে যশোর বিভাগীয় ভ্যাট অফিসের অধীনে ভ্যাটদাতা রয়েছেন ৫ হাজার ৬৫৪ জন।
অভিযোগ রয়েছে যশোর জেলায় ভ্যাটদাতার পরিধি বাড়ছে না। গত ৫-৬ বছর ধরে একই চিত্র রয়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেমন পূরণ হচ্ছে না, আবার ভ্যাটদাতার সংখ্যা না বাড়ার কারণে পুরনো ভ্যাটদাতাদের উপর চাপ বাড়ছে। কাস্টম কর্মকর্তারা সমঝোতার ভিক্তিতে ভ্যাট আদায়ের কারণেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণ বলে জানা গেছে।
শহরের আরএন রোডের একাধিক মোটরপার্টস ব্যবসায়ী জানান, যশোর কাস্টমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা ব্যবসা না হলেও জোরপূর্বক ভ্যাট আদায় করছে। শুধু সরকারের ভ্যাট নয়, তাদেরকেও ঘুষের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা কোন ভ্যাট না দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মোটরপার্টস আমদানিকারক জানান, করোনাকালের ২ বছর ডলার সংকটের কারণে আমি কোন পার্টস আমদানি করতে পারেনি। কিন্তু তারপরও আমাকে ভ্যাট প্রদান করতে হচ্ছে। অথচ আমার পাশের অনেক দোকান রয়েছে যারা কোন ভ্যাট পরিশোধ করে না। শহরের এক আবাসিক হোটেল মালিক জানান, আমাদের কোন মাসে ভালো ব্যবসা হয়, আবার কোন মাসে মন্দা থাকে। কিন্তু কাস্টম এসব বুঝতে চাইনা। তারা ভ্যাট আদায় করেন। আবার ঘুষেরও টাকা দিতে হয়। কোথায় প্রতিকার পাব। এজন্য কিছু বলিনা। কেননা কাস্টমের সাথে বিরোধে গিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, কাস্টমকে ভ্যাটদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলে তাদেরও রাজস্ব আদায় হবে। একই সাথে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের উপর চাপ কমবে। আর অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের পরও কাস্টম অফিসে ব্যবসায়ীদেরকে ধরণা দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক।
এব্যাপারে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোরের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের পর কোন ব্যবসায়ীকে আমাদের অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি তাদেরকে অফিসে ডাকে তাহলে আমাকে অভিযোগ করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।