নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের অনিয়মিত রোগী দেখা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। রোগীদের সেবার বিষয়টি বিবেচনায় এ বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আসছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সুরাহা হয়নি। আর এ নিয়েই অসন্তোষ ও টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী যশোর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকগণ ক্লাসের পাশাপাশি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখবেন। তবে ক্লাসসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা নিয়মিত চেম্বারে বসছেন না। জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসক সংকট রয়েছে। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দ্বারাই এ সংকট মোকাবিলা করা হয়। তবে হঠাৎ করে বহির্বিভাগে গাইনি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বসছেন না। এতে করে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদানে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের নিচ তলার ১২ নম্বর রুমে বসতেন অনারারি মেডিকেল অফিসার। তারা পুরুষ মেডিসিন রোগী দেখতেন। তবে গত বুধবার থেকে ওই রুমে তালা লাগানো রয়েছে। এক নম্বর রুমে মেডিসিন কনসালটেন্ট ও ১৬ নম্বর রুমে সার্জারি কনসালটেন্ট রোগী দেখতেন। তারাও চেম্বার করছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নিজে প্রশাসনিক কাজ বাদ দিয়ে মঙ্গলবার রোগী দেখেন। অপরদিকে, বহির্বিভাগের ৪, ৬, ৭, ১২ ও ১৫ নম্বর কক্ষ থেকে অনারারি মেডিকেল অফিসারদের চেম্বার করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে মানুষ আসে উন্নত ও সঠিক চিকিৎসা নিতে। অনারারি মেডিকেল অফিসাররা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পাশে বসে ব্যবস্থাপত্র লেখেন। কিন্তু এতদিন তারা নিজেরা ব্যবস্থাপত্র লিখে আসছিলেন। এজন্য তাদেরকে চেম্বার থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সব কক্ষে হাসপাতালের নিজস্ব ডাক্তার বসানো হয়েছে। কেবলমাত্র ১২ নম্বর কক্ষে এখনো পর্যন্ত কাউকে বসানো সম্ভব হয়নি।
তাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনিয়মিত ও ইচ্ছামাফিক চেম্বার করার কারণে মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের বাদ দিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব চিকিৎসক দিয়ে বহিঃবিভাগ পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি সুরাহার জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার উভয়পক্ষ বসছেন মাসিক স্বাস্থ্য মিটিংয়ে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ২০১০ সালে মেডিকেল কলেজের ফ্যাল্টি হিসাবে চালু হয়। পরে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ক্লাস ও হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার কামরুল ইসলাম বেনু জেলার মানুষের কথা বিবেচনা করে মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উন্নত ব্যবস্থাপত্র যাতে রোগীরা পাই সে জন্য বহির্বিভাগে চেম্বারের ব্যবস্থা করেন। এর পর থেকে মেডিকেল কলেজের ১৮টি বিভাগের মধ্যে নিরোলোজি, ইউরোলোজি, সার্জারি-মেডিসিন, গাইনি, চর্ম ও যৌন, হৃদরোগসহ মোট ১২টি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি বহিঃবিভাগে রোগী দেখা শুরু করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে অনিয়মিত চেম্বার করেন। এর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। ফলে হাসপাতালের নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকদের চেম্বার না দিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব চিকিৎসক দিয়ে বহিঃবিভাগ পরিচালনা করছেন।
জেনারেল হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের রোগী দেখার জন্য নিদের্শনা থাকলেও তারা হাসপাতালে সঠিকভাবে রোগী দেখছেন না। ফলে সেবা না পাওয়ায় রোগীরা হাসপাতালকে দায়ী করছেন। ফলে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তারা আরও বলেন, এই সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল কলেজের আওতায় থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না। আবার কলেজ কর্তৃপক্ষও সেই সকল অভিযুক্ত চিকিৎসকদের কিছুই বলছেন না।
এবিষয়ে হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মোর্তুজা বলেন, হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব হয়নি। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে যে সকল চিকিৎসকদের নিয়ে অভিযোগ ছিলো তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা পরিচালনা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাথে সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক অসুস্থ থাকায় হাসপাতালের তত্ত্বধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ বহিঃবিভাগে রোগী দেখেছেন বলে জানান।