কল্যাণ ডেস্ক
দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা কাটাতে দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকার বেশি দিন থাকতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা দরকার। নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার কোনো কারণ নেই।
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
বুধবার রাজধানী ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫, সংকটময় সময় প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় অন্যদের মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল, সৈয়দ ইউসুফ সাদাতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা চাই, সরকার ঘোষিত রোডম্যাপের মধ্যেই নির্বাচন হোক। যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
আরও পড়ুন: এবারের টোনটা হবে আলাদা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে তেমন কোনো চাঞ্চল্য দেখছি না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অনেক খাতভিত্তিক সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছে। অর্থনীতিকেন্দ্রিক কিছু সংস্কার আমরা লক্ষ্য করছি। তবে এখন পর্যন্ত জনগণের জীবনে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের অঙ্গনে স্বস্তি আনার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো ত্রিমুখী অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন। বলেন, ‘প্রথমেই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা উচিত, যাতে তারা অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে পুনরুদ্ধারে কিছুটা অবকাশ পায়। দ্বিতীয়ত, বছরের পর বছর ধরে পুঞ্জীভূত চ্যালেঞ্জগুলো একত্রে মোকাবেলা করা। তৃতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা টেকসই করা অর্থাৎ সংস্কার কর্মসূচিকে চলমান রাখা।
ক্ষমতার পালাবদল হলেও অর্থনৈতিক গতিধারার উন্নতি নেই জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। গত বছর একই সময় তা ছিল ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব আহরণে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। রাজস্ব আহরণের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব আদায় বাড়াতে ৪৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার এমন সময়ে ভ্যাট বাড়াচ্ছে, যে সময়ে সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট। মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুযোগ এসেছিল, প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি। তারা পরোক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, জনগণ যে কর দেয়, সরকার পুরোপুরি পায় না। সরকারের সুযোগ ছিল এসব জায়গায় হাত দেওয়ার, কিন্তু দেয়নি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেনি ভ্যাট বাড়াতে। তারা বলেছে যেকোনো উপায়ে রাজস্ব বাড়াতে। কিন্তু সরকার প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়ে পরোক্ষ কর বাড়াচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি কর্মসংস্থান, বেসরকারি বিনিয়োগে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সফলতা এখনো দেখা যায়নি। এ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জনসম্মুখে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি প্রকাশ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব চুক্তি উন্মুক্ত করা হয়নি। বিগত সরকারের সময়ের ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নথি চেয়ে সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিল সিপিডি। তবে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে এই যুক্তি তুলে ধরে ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য অন্তর্বর্তী সরকার দেয়নি।
জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়নি জানিয়ে সিপিডি বলছে, আন্দোলনে মূল কারণ ছিল কর্মসংস্থানের অভাব। বিগত সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি বেকারত্ব পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছিল। সমাজে বৈষম্য বেড়েছিল। গত ছয় মাসে অর্থনীতিতে তেমন চাঞ্চল্য ফেরেনি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারেনি।
অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে পর্যালোচনা করে সিপিডি বলছে, বিদেশি ঋণের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অভ্যন্তরীণ উৎসে নির্ভরতা বাড়ছে, যা আগামীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইন সংস্কারের দরকার রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। তারা আরও বলছে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রে ইতিবাচক গতি রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে আমাদের পোশাক রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে বলে অর্থনীতি একেবারে ডুবে যায়নি। শেষ কয়েক বছরে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ বিদেশ গিয়েছে কাজের সন্ধানে। এই ৪০ লাখ শ্রমজীবী মানুষের একটা বড় অংশ থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। তবে রেমিট্যান্সে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।
আরও পড়ুন: হরতাল-অবরোধসহ ৫ দি