কল্যাণ রিপোর্ট: করোনায় নিভে গেল যশোরের সবার প্রিয় শিক্ষক আব্দুল হালিমের জীবন প্রদীপ। আক্রান্তের ১৪ দিনের মাথায় টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু করোনামুক্ত হলেও নতুন জীবনে ফিরতে পারেননি। ঘাতক ভাইরাসটির সংক্রমণে প্রয়াতের ফুসফুস, কিডনি ও লিভার ড্যামেজ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। সূদুর দেশ আমেরিকার ডালাসের পার্ক ল্যান্ড হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে তিনি পরলোক গমন করেন ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল হালিম যশোর শহরের ডিসি বাংলো সড়কের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করতেন। ছোট ছেলে মশিউর আরেফিন আমেরিকার ডালাসে বসবাস করেন। তার এক মেয়ে দেশটির আরেকটি রাজ্য ফ্লোরিডায় থাকেন। তিন মাস আগে তাদের কাছে সেখানে বেড়াতে যান তিনি। এরমধ্যে তার শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। ডালাসের পার্ক ল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে ১৪ দিনের মাথায় তিনি করোনা নেগেটিভও হন। তবে করোনার সংক্রমণে ফুসফুস, কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে পড়ে। লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল ভোররাতে (বাংলাদেশ সময়) তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে স্ত্রী ও ৫ সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রয়াত শিক্ষক আব্দুল হালিমের ছেলে রিফাত আরেফিন জানান, গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার সময় জানাজা শেষে আমেরিকায় তার বাবার মরদেহের দাফন করা হয়েছে। করোনামুক্ত হলেও ফুসফুস, লিভার ও কিডনি ড্যামেজ হয়ে পড়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা তিনি অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর।
১৯৭০ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন প্রয়াত শিক্ষক আব্দুল হালিম। জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতী পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। ২০০৪ সালে যশোরের মণিরামপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বিষয়গুলো পড়াতেন। বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান পড়ানোর ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও পারদর্শীতা ছিলো অসাধারণ। এই বিষয়টির শিক্ষক হিসেবে তার সুনাম যশোরের সীমানা পেরিয়ে ছিলো দেশ জুড়ে। তার অনেক ছাত্র চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতিসহ পেশাগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জনপ্রিয় শিক্ষক আব্দুল হালিমের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে তার ছাত্ররাসহ বিভিন্ন সংগঠন। ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটি সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু গভীর শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
যশোর ইনসটিটিউটের পাঠাগার বিভাগের সম্পাদক ও জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সহসভাপতি এস নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো পড়ানোয় তার দক্ষতা ছিলো অসাধারণ। তার ক্লাস করলে বিষয়গুলো খুব সহজেই বুঝতে পারতো শিক্ষার্থীরা। যার কারণে তার জনপ্রিয়তা ছিলো অনেক।
যশোর প্রেসক্লাবের সম্পাদক ও জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান বলেন, জীবনের যেকোন বড় সাফল্য ও প্রাপ্তির সময় শিক্ষকজনের মধ্যে যাদের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তাদের মধ্যে হালিম স্যার অন্যতম। ছোটবেলায় আমাদের শেখানো হতো শিক্ষক মানে পিতা। তার মর্যাদা পিতার সমতুল্য। আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদের একজন ছিলেন তিনি।
তিনি জানান, বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো পড়ানোর ক্ষেত্রে হালিম স্যার ছিলেন অতুলনীয়। তার অসাধারণ দক্ষতার পাঠদান বিজ্ঞানের জটিল বিয়য়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্য করে তুলতো। যার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি খুব প্রিয় ছিলেন। প্রয়াতের বিদেহী আতœার শান্তি কামনার পাশপাশি তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।